রপ্তানিতে পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যে অগ্রগতি নেই

আবু আলী
২০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৫
শেয়ার :
রপ্তানিতে পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যে অগ্রগতি নেই

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বেশি সমস্যায় পড়বে রপ্তানি খাত। বর্তমানে এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ায় বিশ্ববাণিজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এলডিসি উত্তরণের পর এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তারা প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে প্রস্তুতির পাশাপাশি অর্থনীতিতে বিশেষ করে রপ্তানিতে পণ্য এবং রপ্তানির বাজারে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ তিন বছর পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশকে উত্তরণের পথে স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই নীতিসহায়তা প্রয়োজন।

জানা গেছে, এলডিসি উত্তরণে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়বে রপ্তানি খাত। বিভিন্ন সময়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে কথা বলা হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার। জানা গেছে, প্রায় ১৭ বছর আগে ‘এক জেলা এক পণ্য’ ধারণাকে সামনে রেখে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে পাইলটিংভাবে কয়েকটি জেলায় বিশেষ পণ্যের খোঁজও করা হয়, কিন্তু বাস্তবে সফলতা পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে ‘এক গ্রাম এক পণ্য’ ধারণা নিয়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণের নতুন গল্প সামনে এনেছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর তিন মাসের মাথায় পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এতে সেই আলোচনা আলোর মুখ দেখেনি।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ১২৫টি পণ্য থাকলেও তৈরি পোশাক এবং এ খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য থেকে আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ। অবশিষ্ট শীর্ষ ১০টি পণ্য থেকে আসে প্রায় ৮ শতাংশের মতো। এর বাইরে শতাধিক পণ্য রপ্তানি হয় খুবই সামান্য। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পণ্যের বহুমুখীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি ইপিবি।

জানা গেছে, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে ১৭ বছর আগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর নেওয়া ‘এক জেলা এক পণ্য’ উদ্যোগটি ব্যর্থ হওয়ার পর সেই ব্যর্থতার কারণ না খুঁজে এবার হাতে নেওয়া হয়েছে ‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ নামে নতুন উদ্যোগ। এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এ উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রামভিত্তিক পণ্য নির্বাচনে দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে সরকার পরিবর্তনের পরপরই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের রপ্তানি ঝুড়ি এখনো শুধু পোশাককেন্দ্রিক। পোশাক ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক ও বড় আকারে উৎপাদনযোগ্য নতুন পণ্যের সংখ্যা খুবই কম। তাই নতুন বাজারে প্রবেশ করা কার্যত কঠিন। পণ্যের বৈচিত্র্য সীমিত থাকলে বাজারের বৈচিত্র্যও টেকসইভাবে বাড়তে পারে না। তাই ‘অপ্রচলিত’ বাজারের জন্য নগদ প্রণোদনা দিলেও সামগ্রিকভাবে রপ্তানি বাজারের অবস্থান তেমন পরিবর্তন হয় না।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমরা বলে আসছি পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজারের খোঁজ করতে হবে। তিনি বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংরক্ষণমূলক শুল্ক কাঠামো বাধা হিসেবে কাজ করছে। রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে। আর আমাদের নীতি সহায়তা এমনভাবে তৈরি করা উচিত, তা হবে অন্যান্য দেশের দেওয়া সহায়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের শুল্ক ও কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা উচিত এবং বাজারে পৌঁছানোর সময় কমাতে হবে। একই সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি শক্তিশালী করতে হবে, যেন এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার উদীয়মান বাজারের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করা বা শুল্ক বাধা কমানো যায়।