বাজিতপুর পৌর মেয়রের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

তাবারুল হক
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
বাজিতপুর পৌর মেয়রের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

২০২১ সালে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই ধারাবাহিকতায় তার সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

মেয়র আনোয়ারের বড় ভাই মো. আফজাল হোসেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেনের ছোট ভাই বাজিতপুর পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন। মেয়র তার বড় ভাইয়ের প্রভাব কাজে লাগিয়ে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজ না করেই সরকারি ঠিকাদারি কাজের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাজিতপুর উপজেলায় সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জমি দখল করে মেয়র ও তার ভাই মার্কেট নির্মাণ করছেন। বাজিতপুর, সরারচর, দিলালপুর, পিরীজপুরসহ অনেক বাজার নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন নির্মাণকাজের ঠিকাদারি কাজ পান তাদের আত্মীয়স্বজনরা। বিল-হাওর নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছেন তারা। তাদের দখলে বেঙ্গলা চরবাদা, কইয়া খায়রা, মাইজচর, বাহেরবালী, হুমাইপুর, ঘোড়াউত্রা নদী জলমহাল।

অভিযোগ রয়েছে, মেয়র আনোয়ার বাজিতপুরের নোয়াপাড়া গ্রামে প্রতিবেশীদের সরিয়ে দিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে তিনতলা পাকা বাড়ি করেন। স্থানীয় বসন্তপুর মৌজায় সিনামহলের

সামনে সরকারি জমিতে পাঁচটি দোকান বানিয়েছেন। দড়িঘাগটিয়া মৌজায় সিনামহলের প্রায় ১৫ শতাংশ জমি, বাজিতপুর বাজারে নাপিতমহলের পুকুর, বাজিতপুর পৌরসভার দড়িঘাগটিয়া মৌজায় প্রায় ২ একর জমি দখল এবং বসন্তপুর মৌজায় প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে তিনতলা মার্কেট তৈরি করেছেন।

এ ছাড়া দড়িঘাগটিয়া মৌজায় সিনামহলের প্রায় ১৫ শতাংশ জমি, দড়িঘাগটিয়া মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের দক্ষিণ পাশে প্রায় ২ একর জমি, নান্দিনা আলিয়াবাদ মৌজায় ব্যাপারীপাড়ার প্রায় ২০ শতাংশ জমি, তাতলচর মৌজায় বাজিতপুর দিলালপুর রাস্তার পশ্চিম পাশে প্রায় ৬০ শতাংশ জমি, গাজীরচর মৌজায় প্রায় ৮ একর জমি, শশেরদীঘি মৌজায় প্রায় ১০ একর ধানি জমি তিনি দখল করেছেন।

অন্যদিকে, তার নামে বাজিতপুর মৌজায় মতুরাপুর গ্রামের পূর্বপাশে বাবর আলীর বাড়ির পশ্চিম পাশে ২০ শতাংশ জমি, দীঘিরপাড় মৌজায় মসজিদের ফেরিঘাটের পাটুলীর উত্তর পাশে ২০ শতাংশ জায়গায় দোকান নির্মাণ এবং ভাগলপুর মৌজায় মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল মিয়ার জমি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, কমিশন থেকে মেয়র আনোয়ারের সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা শিগগিরই এ সংক্রান্ত নোটিশ পাঠাবেন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক নারগিস সুলতানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাজিতপুর পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ পেয়েছে দুদক। অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে প্রাপ্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য গত ২১ নভেম্বর কমিশন সভায় তার সম্পদ ও দায়-দেনার হিসাব বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের আলোকে পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেনের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের জন্য আদেশ জারি করতে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, এই পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। দুদকের সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয় থেকে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। চলতি বছরের ১৯ জুলাই অভিযোগটির অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঠানো হয় দুদকের নতুন অফিস কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে। ওই অফিসের উপপরিচালক অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফ আমাদের সময়কে জানান, দুদক থেকে এ পর্যন্ত কোনো নোটিশ পাননি তিনি। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আসলে কিছু নেই। এগুলো হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের। মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে মান-সম্মান নষ্ট করা গেলে প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্য হাসিল হয়। এ জন্যই দুদকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে।