প্রতিশ্রুতিতেই আটকে গেল জলবায়ু সম্মেলন

আরিফুজ্জামান মামুন
২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৬
শেয়ার :
প্রতিশ্রুতিতেই আটকে গেল জলবায়ু সম্মেলন

ব্রাজিলের অ্যামাজন উপকূলবর্তী নগরী বেলেমে অনুষ্ঠিত দুই সপ্তাহব্যাপী কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে গতকাল এক ভঙ্গুর সমঝোতার খসড়া সামনে এসেছে। বিশ্ব নেতাদের মিলনের মঞ্চে দৃষ্টিগোচর হয়েছে সংকট ও দ্বিধার ছায়া। বিশেষ করে যখন বন উজাড়, বৈশি^ক উত্তরণ ও বিচ্যুতি-ঘটিত জলবায়ুর থাবায় দ্রুত সময় কমে আসছে। এই খসড়ায় সবচেয়ে বড় শূন্যতা দেখা গেছে জীবাশ্ম জ্বালানিতে রূপান্তরের রোডম্যাপের অংশে। একসময় আলোচনায় ছিল শক্ত ধাপ নিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি উন্মুক্তভাবে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি, কিন্তু শেষ নথি থেকে তা বাদ পড়েছে।

এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অভিযোজন অর্থায়ন তিনগুণ বাড়ানোর আহ্বান রাখা হয়েছে, তবে বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও সময়সীমা স্পষ্ট নয়। এসবের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে- চুক্তির খসড়া উদার নয়, কিন্তু আমরা বিরোধ করব না। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে- বেসরকারি অর্থায়ন, ঋণ শোধের অবস্থা এবং বাস্তব নীতি ছাড়া সবকিছু শুধু রূপকথা হয়ে থাকবে।

আলোচনায় ধরা পড়েছে এমন প্রশ্ন : আমরা কি সত্যিই বৈশি^ক উত্তরণে দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পারব, নাকি শক্তিধর তেল-গ্যাস উৎপাদনকারী দেশের বাধার মুখে তা একান্ত প্রতিশ্রুতিতে আটকে থাকবে? সময় শেষ হয়ে আসছে, তবে সিদ্ধান্তে দ্রুততা নেই। ব্রাজিলে সেই উদ্বেগের ভাবনায় আটকে রয়েছে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি; শক্তিধর তেল রপ্তানিকারক দেশের প্রভাব; উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবিতে অপ্রস্তুত উত্তর।

এই তিনটি উপাদান এখন কপ-৩০ এর পটভূমিতে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। বৈঠকসূচি শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু আলোচনা পেছাল চাপের কারণে, গভীর রাত অবধি বৈঠক চলল। তেলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর এক অংশ স্পষ্টভাবে বলেছে- আমরা এখনও সেই রোডম্যাপ মেনে চলব না। ফলে রোডম্যাপটি চুক্তির মূল নথি থেকে বাদ পড়েছে এবং রাখা হয়েছে একটি সাইড-পেপার বা প্রেসিডেন্সি রোডম্যাপ হিসেবে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে- যদি অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও ঋণপ্রদান না হয়, তাহলে কোনো রোডম্যাপই তাদের জন্য কার্যকর হবে না। এই দাবি মূলত সময়সীমা ও অর্থায়নের স্পষ্টতার অভাবে ঘুরে ফিরে এসেছে।

ব্রাজিলের কপ-৩০ প্রেসিডেন্সি বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে এবং বলেছে- চুক্তি হবে, কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্তগুলো আমাদের সামনে রয়েছে। এই খসড়া চুক্তি অনুযায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির উল্লেখ নেই; তবে চুক্তিটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় অগ্রগতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।

তবে এই অগ্রগতি কি যথেষ্ট? অনেকে বলছেন না। অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যা সাময়িক চুক্তি-খসড়ায় স্পষ্ট হয়নি। বন উজাড়, লবণাক্ততার অগ্রগতি, শক্তি রূপান্তর- এসব বিষয় এখনও চ্যালেঞ্জ।

কপ-৩০ এর উপস্থিত বিশ্লেষকরা বলেছেন- যদি সিদ্ধান্ত দ্রুত না হয় এবং টালবাহানা হয়, তাহলে এই সম্মেলন নতুন দৃষ্টান্ত হবে না। বেলেমে চুক্তি-খসড়ায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখন সবচেয়ে জরুরি হলো সময়নিষ্ঠ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। সময় কম, পথ কঠিন, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বিশ্ব আজ বেঁচে আছে প্রতীক্ষার এক মুহূর্তে।