বাজেটে কমছে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতি এক অস্থির মোড়ে দাঁড়িয়ে। প্রবৃদ্ধি এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে, দারিদ্র্য বেড়েছে দ্বিগুণ হারে, আর খেলাপি ঋণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমলেও বাস্তব ক্রয়ক্ষমতা ফিরছে না, আর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হলেও টেকসই ভিত্তি তৈরি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগেভাগেই বাজেটের ওপর কাঁচি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থসচিব, বাণিজ্য সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব, পরিকল্পনা সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হচ্ছে। আর মূল্যস্ফীতির বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হচ্ছে ৬ শতাংশ। অক্টোবর পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ, গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের ওপরেই থাকছে। সেখান থেকে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দেশে প্রথমবারের মতো চলতি বাজেটের আকার কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু প্রথম প্রান্তিকের পরই বাজেটের আকার ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। বাজেটের আকার আরও বেশি কমানোর কথা আলোচনা হয়। যেহেতু আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। তাদের নানা ধরনের পরিকল্পনা থাকবে, এ জন্য বাজেটের আকারে বড় পরিবর্তন আনছে না অন্তর্বর্তী সরকার।
আরও পড়ুন:
ডেমরায় এক কক্ষে কিশোরী ও যুবকের মরদেহ
জানা গেছে, সামষ্টিক অর্থনীতির এসব অবস্থা বিবেচনায় রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে বাস্তবভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অর্থনীতি খাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠক। প্রতি তিন মাস অন্তর দেশের অর্থনীতি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয় ওই বৈঠকে। পাশাপাশি বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়।
সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জিডিপির হার বাড়ানো বা অর্জনকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
আফরোজা পারভীন পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বেশি হলেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছেনি। এখন প্রবৃদ্ধি বেশি বা কম সেদিকে নজর নয়, কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সূত্র বলছে, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উভয় দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে আগামী বাজেটের রূপরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সর্বশেষ ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পণ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বৈরী রাজনৈতিক অবস্থায় রাজস্ব আহরণ কম, বিনিয়োগ না হওয়া, ডলার সংকট, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক ঋণের অত্যধিক সুদহার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। আগামী বছরও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে- এমন পরিস্থিতি সামনে রাখা হয়েছে।