পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে নজরদারি প্রয়োজন
পেঁয়াজের বাজারে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। রাজধানীর বাজারে গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গত সপ্তাহে পণ্যটি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে- যা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। সরবরাহ ঘাটতি, আমদানি বন্ধ এবং মজুদদারদের কারসাজি- সব মিলিয়ে বাজারে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এমন মূল্যবৃদ্ধি শুধু বাজারের প্রাকৃতিক গতিতে ঘটে না, এর পেছনে প্রভাবশালী মজুদকারীদের অস্বচ্ছ ভূমিকা এবং বাজার মনিটরিংয়ের ঘাটতি স্পষ্ট। যদিও বলা হচ্ছে- বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। অথচ নতুন পেঁয়াজ আসতে এখনও মাসখানেক দেরি। এর ফলে সরবরাহে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা বাজারে একের পর এক মূল্যবৃদ্ধির ঢেউ তুলছে। সামান্য সরবরাহ ঘাটতি বা আমদানিতে বিঘ্ন ঘটলেই যেন আগুন লেগে যায় বাজারে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পুরনো পেঁয়াজ ফুরিয়ে আসা এবং মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে দেরি হওয়ায় সারাদেশের বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ একেবারে বিপাকে পড়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এখন বাজারে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবছর একই সময়ে এই সংকট কেন দেখা দেয়? সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কি কোনো পূর্বাভাস বা পরিকল্পনা থাকে না? বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের মৌসুমি বৈচিত্র্য এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বহু পুরনো সমস্যা। তবু দেখা যায়, প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ যখন পুরনো পেঁয়াজ শেষ হয়ে আসে, তখন বাজারে মজুদদারদের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। তারা পণ্য গুদামে আটকে রেখে দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তাদের দুরবস্থা পুঁজি করে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি। প্রতিবারের মতো তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আবারও দাম বাড়াচ্ছেন।
আসল কথা হলো ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সরকারের উচিত দেশের বাজারে কেউ অতিরিক্ত মুনাফা লাভের চেষ্টা করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা। এ বিষয়ে কারও অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে বাজারে যারা প্রভাব বিস্তার করছেন, তারা বড় ব্যবসায়ী। পেঁয়াজের দামে নৈরাজ্য ঠেকাতে হলে তাদের ধরা উচিত। দাম কমা বা বাড়ার পেছনে ছোট আড়তদার বা খুচরা ব্যবসায়ীদের তেমন ভূমিকা নেই। বাজার তদারকি করে মজুদদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে এসব পণ্যের দাম গত বছরের মতো লাগামহীন হয়ে যাবে। আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভালো নয়। সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িয়ে থাকে তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। কার্যকর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। এখনই সময় সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার। পাশাপাশি দ্রুত প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে সরবরাহে স্বস্তি ফেরে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সংরক্ষণ অবকাঠামো বাড়ানো জরুরি।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
পেঁয়াজের বাজারে এই অস্থিরতা কেবল একটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনা নয়- এটি প্রশাসনিক অদক্ষতা, নীতিনির্ধারণের ঘাটতি এবং বাজার মনিটরিং ব্যর্থতার প্রতিফলন। সরকারের উচিত এখনই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করা। না হলে পেঁয়াজের বাজারে এই অগ্নিঝরা পরিস্থিতি আগামী দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই আমরা বলব, সরকার সঠিক পথে এগোলে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ার কারণ নেই।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি