দিকে দিকে মাফিয়াতন্ত্র-২
ইদি আমিনকে মনে আছে? উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭১ সালে দেশটির ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৭৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০০৩ সালে নির্বাসনকালে মারা যান সৌদি আরবে। তাকে নিয়ে অনেক কীর্তিকাহিনি রয়েছে, এই স্বল্পপরিসরে তুলে ধরা অসম্ভব; দরকারও নেই। ঐতিহাসিক সত্য হলোÑ ইদি আমিন কখনো ‘গণতান্ত্রিক’ হওয়ার ভান করেননি, সরাসরি একনায়কত্ব করেছিলেন। তার সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ ছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, আমিনের শাসনামলে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। কয়েক হাজার এশীয়কে বহিষ্কার করা হয়েছিল, উগান্ডার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতে। এক কথায়, রাষ্ট্রাধিপতি হিসেবে ভীষণ কুখ্যাত ছিলেন ইদি আমিন।
এতকাল পর সেই ইদি আমিনের কথা স্মরণ করতে হচ্ছে ইওয়েরি মুসেভেনি প্রসঙ্গে। সম্প্রতি উগান্ডার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ইদি আমিন মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন সাবেক আইনপ্রণেতা হাসান কাপ্স ফুঙ্গারো। বিষয়টি পৌঁছায় মুসেভেনির কাছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মুসেভেনি জবাব দিয়েছেন, ‘ইদি আমিনের কাজের গবেষণায় ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষমাশীল উগান্ডানরা ইদি আমিনের জীবিত সহকর্মীদের ক্ষমা করে দিয়েছে, এটাই যথেষ্ট। ওই ইতিহাস ভুলে যান।’
এসব তথ্য আপনিও জানতে পারেন ১৩ নভেম্বরের অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস থেকে। সেদিন এ নিয়ে সবিস্তার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থাটি।
উগান্ডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি। ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। তানজানিয়ার সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে যারা আমিনকে উৎখাত করেছিল, তাদের মধ্যে মুসেভেনির সশস্ত্র গ্রুপও ছিল। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রায় চার দশক ধরে বিরতিহীনভাবে মুসেভেনি বলে চলেছেন, ইদি আমিন ছিলেন ‘আদিম একনায়ক।’
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
আমিনের মতো মুসেভেনিও ক্ষমতা দখল করেছেন জোর করে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সেনাবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড নির্ভরশীল তিনি। বল্গাহীন দুর্নীতি, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ, পুলিশের নৃশংসতা, বিরোধীদের দমনÑ এসবের ছাপ রয়েছে তার সরকারের গায়েও। তাই আমিনকে বিচার করার নৈতিক অধিকার তার নেই, বলেন মুসেভেনির সমালোচকরা। তারা বলেনÑ গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বিনা বিচারে আটক ইত্যাদি মুসেভেনির প্রায় চল্লিশ বছরের শাসনামলের চিত্র। প্রায় ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন আমিন। প্রায় ৪০ বছর ক্ষমতায় আছেন মুসেভেনি। তিনি বলছেন, ইদি আমিন ‘আদিম’ একনায়ক এবং আমিনের ‘ইতিহাস’ ভুলে যেতে হবে।
ভুলে যেতে হবে, কারণ ওটা খারাপ ইতিহাস। মনে রাখতে হবে মুসেভেনিকে। তার সবটাই ভালো। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু। তার সরকার উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক ত্রাণ পায়। তিনি বারবার বলেন, জোর দিয়ে বলেনÑ আমিন যদি ক্ষমতা দখল করে কখনো প্রেসিডেন্ট না হতেন তা হলে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হতে পারত উগান্ডা।
তাই নাকি? তা হলে আপনার আমলে তা হয়নি কেন? আপনি তো প্রচুর সময় পেয়েছেন। এ কথা বলেন দেশটির সাধারণ নাগরিকদের অনেকে। জোয়েল সেনিওনি বিরোধী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইউনিটি প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র এবং আইনপ্রণেতা। সম্প্রতি তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ‘মুসেভেনি মনে করেন তাকে দিয়েই এই দেশের শুরু এবং তিনি অলৌকিক কীর্তি করে ফেলেছেন। আমাদের অতীত নেতারা ভুল করেছেন, সন্দেহ নেই, সেগুলোই পুঁজি করছেন মুসেভেনি এবং আরও খারাপ করেছেন।’ সেনিওনি বলেন, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ‘সবগুলো প্রতিষ্ঠান দখল’ করে নিয়েছেন মুসেভেনি।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
উগান্ডায় কি নির্বাচন হয় না? নিশ্চয় হয়। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬, ২০২১ সালে নির্বাচন হয়েছে। সব নির্বাচনেই জয়ী হয়েছেন মুসেভেনি। আসুন, আমরা এবার একটা অঙ্ক মিলাই। ক্ষমতা+ইতিহাস+প্রতিষ্ঠান+নির্বাচন=? কী মনে হয়, প্রিয় পাঠক, আপনার অঙ্ক কী বলে? দুই আর দুইয়ে পাঁচ?
প্রমিত হোসেন : সাহিত্যিক ও অনুবাদক; আমাদের সময়ের সহযোগী সম্পাদক
আরও পড়ুন:
যুদ্ধ সমাপ্তিরও ঘোষণা আসুক এটাই প্রত্যাশা