যুদ্ধ সমাপ্তিরও ঘোষণা আসুক এটাই প্রত্যাশা

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
যুদ্ধ সমাপ্তিরও ঘোষণা আসুক এটাই প্রত্যাশা

ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার থেকে। চার দিনের এ যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। প্রথমে অবিরাম বিমান হামলা চালায়, তার পর শুরু করে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান। এসব হামলা ও অভিযানে ১৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৫ হাজারের ওপরে। ইসরায়েলের বর্বর হামলা থেকে মসজিদ, গির্জা, উদ্বাস্তু শিবির, হাসপাতাল কিছুই রক্ষা পায়নি। বেসামরিক ও নিরস্ত্র গাজাবাসীর জন্য পাঠানো ত্রাণও পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল, তার তোয়াক্কা না করে নির্বিচার আক্রমণ চালিয়ে গেছে। হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে বলে সদম্ভে ঘোষণা করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। গাজাবাসীকে ভয়ঙ্কর এক মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেন তিনি। পাশে পান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু আস্ফালন আর শক্তির পৈশাচিক প্রয়োগেও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি। হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলিদের উদ্ধার করা ছিল সেই লক্ষ্য। হামাসের যোদ্ধারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছে মাতৃভূমির জন্য। শক্ত প্রতিরোধ ও পাল্টা হামলা চালিয়েছে হানাদারদের বিরুদ্ধে। আগ্রাসন রুখে দিতে লড়াই চালিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিশে^র নানা প্রান্তে প্রতিবাদের আওয়াজ ওঠে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত থেকে শুরু করে সরকারি মহল পর্যন্ত সোচ্চার হয়। নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ হত্যার কারণে ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক দেয় তারা। এমন এক প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েল। চার দিনের এই যুদ্ধবিরতিতে গাজায় অতিপ্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পৌঁছাবে, ইসরায়েলে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে। অন্যদিকে ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ছেড়ে দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি হয়েছে বন্দি ও জিম্মি মুক্তির শর্তে। এতে মধ্যস্থতা করেছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরায়েল এযাবৎ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যা করে আসছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল, আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন এবং যুদ্ধাপরাধ। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনী যে বর্বরতা প্রদর্শন করেছিল, ইসরায়েলের বর্বরতা তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বললে অত্যুক্তি হবে না। ইসরায়েলি সেনারা প্রতিদিনই পাখির মতো গুলি করে মারে ফিলিস্তিনি শিশুদের, বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে উচ্ছেদ করে ফিলিস্তিনিদের, সেখানে নির্মাণ করে ইহুদি বসতিÑ এই বর্বরতা কখনো কখনো নাৎসি বাহিনীর নির্যাতনকেও ছাড়িয়ে যায়। বিশে^র সামনে ইসরায়েল এসব অপরাধ করে শক্তির জোরে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মদদে, সে কোনো কিছুই পরোয়া করে না। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সে মানে না। এসব কারণেই বছরের পর বছর ধরে অশান্তির আগুন জ¦লছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি থেকে যুদ্ধ সমাপ্তিরও ঘোষণা আসুক, এটাই প্রত্যাশা। কিন্তু সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় ফের জোরদার হামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে!