তিস্তার ২৫টি চরে স্বাস্থ্যসেবা সংকট
ভরসা একমাত্র নৌকা ও ভার
রাজারহাট উপজেলার তিস্তা নদীর পশ্চিম তীরজুড়ে বিস্তৃত ২৫টি চরের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আজও বঞ্চিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে। বন্যা ও নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো এসব মানুষদের জীবনযাত্রা নির্ভর করে নদী আর নৌকার ওপর। দূর্যোগকালে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
চর খিতাবখাঁ গ্রামের ইউসুফ আলী (২৮) বলেন, ‘হাগা আর নাপা ছাড়া ঘরে আর কিছু নাই। গা গরম হলে নাপা খাই, হাগা হইলে হলুদ ট্যাবলেট খাই। ডাক্তার নাই, যাব কোথায়?’ তিনি জানান, চরের শিশু বা গর্ভবতী নারী অসুস্থ হলে কাইম এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয় নৌকা পার হয়ে। মাঝেমধ্যে রাতের বেলায় ধাত্রী পেতেও কষ্ট হয়।
সরেজমিন জানা যায়, রাজারহাটের তিস্তার চরগুলো- শাওলার চর, বিদ্যানন্দের চর, হায়বত খাঁর চর, চর হংসধরসহ অন্তত ২৫টি চরে নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা প্রশিক্ষিত চিকিৎসক। সুপেয় পানির সংকট, সচেতনতার অভাব এবং নৌযান স্বল্পতার কারণে চরবাসীরা প্রায়ই জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে।
বিদ্যানন্দের চরের শরিফুল ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘শীত-বর্ষায় মা-বুড়া কেউ অসুস্থ হইলে দিকবেদিক ছুটতে হয়। নৌকা পাই না, মানুষ মরেও যায়।’
নৌকার মাঝি নুর ইসলাম ওরফে বোচা (৫৫) বলেন, ‘আমার নৌকা আছে, লোক নাই। কিন্তু কেউ অসুস্থ হইলে যত রাতই হোক ছুটে যাই।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় তারা নৌকাওয়ালাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চরবাসীরা জানান, সম্প্রতি কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও চরাঞ্চলে কাজ শুরু করেছেন, তবে তা পর্যাপ্ত নয়।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল ইমরান বলেন, চরবাসী এখনও নাগরিক ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিছুটা বঞ্চিত। প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।
এদিকে বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউস দুর্যোগপ্রবণ এলাকার তথ্য দ্রুত সরকারি সংস্থার কাছে পৌঁছাতে ‘রিপোর্ট নাউ বিডি’ ওয়েবসাইট চালু করেছে। সংস্থার উপপরিচালক মো. সাদিক আল হায়াত বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত উদ্ধার ও স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
চরবাসী ও সচেতন মহলের দাবি- প্রত্যেক বড় চরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, পর্যাপ্ত ডাক্তার ও ওষুধ সরবরাহ, নারীদের জন্য স্যানিটারি সামগ্রী এবং জরুরি রোগীর জন্য নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালুর। পাশাপাশি নদীপথ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।