ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে চূর্ণ সুবর্ণচরের কৃষকের স্বপ্ন

আরিফুর রহমান, সুবর্ণচর (নোয়াখালী)
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে চূর্ণ সুবর্ণচরের কৃষকের স্বপ্ন

মাঠজুড়ে ছিল কৃষকের সোনার ফসল। কেউ চাষ করেছিলেন ধান। কেউবা ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, শিম ও মুলাসহ শীতকালীন নানা শাকসবজি। আর কয়েক দিন পরেই আমন ধান কাটার ধুম পড়ত। আর শীতের সবজি উঠত হাটবাজারে। এতে লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন সুবর্ণচরের কৃষকরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। সুবর্ণচরে আমন, শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবারের (১৭ নভেম্বর) ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে সুবর্ণচরের উপকূলীয় এলাকার ফসলের জমি ও গাছপালা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে সুবর্ণচরে ১০ হাজার ৮৭৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষণের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের সব ধরনের ফসল ও শাকসবজি।

উপজেলায় মিধিলির আঘাতে গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে উপজেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সোমবারও (২০ নভেম্বর) বন্ধ ছিল। এ সময় গাছচাপায় বেশ কিছু বসতঘর ও গবাদিপশুর ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চরবাটা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, তাদের এলাকার অধিকাংশ জমির ধান পানির নিচে। তিন-চার দিন আগে অনেক কৃষক ধান কেটে শুকানোর জন্য ক্ষেতে রেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে তাদের ধানগুলো ক্ষেতেই ডুবে গেছে। এমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ভাবেননি তারা।

পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতায় সব ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে। এ বছর তিনি বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন। তিনি সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করেন।

সবজিচাষি মো. হানিফ বলেন, আমি ফুলকপি, টমেটো ও মুলা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে বীজ রোপণ করেছি কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমার সব শেষ করে দেয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, সুবর্ণচরে ঘূর্ণিঝড়ে রোপা আমন, সবজি, সরিষা ও খেসারির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর মাঠে মোট ৩৯ হাজার ৭৩৫ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১০ হাজার ৮৭৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন মাঠে ৩০ হাজার ৯৬৮ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর, সবজি মাঠে ৩ হাজার ৬১৭ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৭৯ হেক্টর, সরিষা ২৫০ হেক্টরের মধ্যে ২৫০ হেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর খেসারি ৪ হাজার ৯০০ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯২০ হেক্টর। তবে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে সম্ভাব্য সরকারি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আশ^স্ত করেন কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ।