৩০০ বছরের ঐতিহ্য হারাচ্ছে ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প

সাহিদুর রহমান, ইসলামপুর (জামালপুর)
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
৩০০ বছরের ঐতিহ্য হারাচ্ছে ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প

বিলুপ্তির পথে জামালপুর জেলার ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প। উপজেলার দরিয়াবাদ গ্রামের এ শিল্পটি এক সময় বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯৪২ সালে লন্ডনের বার্মিংহামে সারা বিশ্বের হস্তশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। সেই প্রদর্শনীতে ইসলামপুরের প্রয়াত কাঁসাশিল্পী জগৎচন্দ্র কর্মকারের কারুকার্যখচিত কাঁসার কাজ বিশ্বখ্যাত শিল্প হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেছিল। কিন্তু বিশ^বিখ্যাত এই শিল্পটি বর্তমানে নিত্য ব্যবহার্য প্লাস্টিক, স্টিল, কাচ ও সিরামিকের তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাজার দখল করে নেওয়ায় কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর ফলে বেকার হয়ে পড়েছে ঐতিহাসিক কাঁসাশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকরা। এদিকে শিল্প মালিকরাও পুঁজি, শ্রমিক সংকট ও কাঁসা তৈরির কাঁচামালের ঊর্ধ্ব মূল্যের কারণে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়েই পৈতৃক ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকেই। এ কারণে এক সময়কার বিশ^খ্যাত কাঁসাশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে।

যে কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে কাঁসাশিল্প : এক সময়কার বিশ^বিখ্যাত শিল্পটি বর্তমানে নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিক, স্টিল, কাচ ও সিরামিকের তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন রকমের কম দামি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাজার দখল করায় মূল্যবান কাঁসার তৈরি তৈজসপত্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।

কাঁসাশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি নারায়ণচন্দ্র কর্মকার বলেন, শিল্পটি বিশ্বখ্যাতিমান হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কাঁসাশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। তিনি এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন।

বর্তমানে কাঁসাশিল্পের কারখানা ও দোকানের সংখ্যা : এক সময়ে সহস্রাধিক কাঁসাশিল্প কারখানা থাকলেও বর্তমানে তা কমতে কমতে ১০টি কারখানা ও ৩টি মাত্র দোকান। কাঁসাসামগ্রী বিক্রির স্মৃতি ধরে রেখেছে। প্রচলিত রয়েছে, কাঁসারিপাড়ার কাঁসারিদের টুংটাং শব্দের ওই এলাকায় সৃষ্টি হতো সুমধুর সুর। বর্তমানে ওই সুরটি হারিয়ে গেছে। তবে ওই সুরের স্মৃতি এখনো ধরে রেখেছেন শুধু স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কাঁসাশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্প মালিক ও কারিগরদের উপজেলা সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কাঁসার তৈরির জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায় সেই পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।