অভিভাবক-সন্তান সম্পর্কের দায় ও দরদ

সাইদুল কবির স্বাধীন
২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৬
শেয়ার :
অভিভাবক-সন্তান সম্পর্কের দায় ও দরদ

বর্তমান আধুনিক সমাজের কিশোর-যুবকদের সামাজিক, মানসিক বা নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়ে আমরা কেউই অনবগত নই। প্রায়ই শোনা যায়Ñ সন্তান অবাধ্য হয়ে গেছে, অনৈতিক কাজ করছে, মাদকাসক্ত হয়ে গেছে কিংবা ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলোÑ প্রাথমিক পর্যায়ে যে কারও সন্তানের এসব কর্মকাণ্ডের দায়ভার কে নেবে? নিশ্চয়ই অভিভাবকরা। আবার অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবকদের অজান্তেই সন্তান এসব করে বেড়াচ্ছে। একজন অভিভাবক হিসেবে শুধু ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলেই অভিভাবকত্ব শেষ হয়ে যায় না, একটি সন্তানের জন্মের পর থেকে তার বেড়ে ওঠা পর্যন্ত তাকে সামাজিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার, ঠিক-বেঠিক, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি সব বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বড় করে তোলা একজন অভিভাবকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বর্তমান সমাজে ঠিক এই জায়গাটায় পিছিয়ে আছেন অভিভাবকরা, যারা মনে করেন সন্তানকে কিছু বলা যাবে না, তারা তাদের মতো করে বেড়ে উঠুক। শাসন বা কিছু বলতে গেলে আবার যদি রাগের বশে কিছু করে বসে বা অন্য নানা কারণে বর্তমান সময়ের অভিভাবকরা বেশির ভাগ সময়ই নিজেদের সন্তানদের শাসন করা থেকে বিরত থাকেন, যা কাল হয়ে দাঁড়ায় সে সন্তানের জন্য, তারা আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়ে নানা অন্যায়ের সঙ্গে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে দুটি ঘটনা ঘটে, যা মোটামুটি সারাদেশেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর প্রথমটি গাজীপুর, দ্বিতীয়টি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হত্যার ঘটনা। ঘটনাগুলো থেকে আমাদের সম্মানিত অভিভাবকদের শিক্ষা নেওয়ার আছে, তারা চাইলেই তাদের সন্তানদের ঠিক-বেঠিক ন্যায়-অন্যায় বোঝানোর মাধ্যমে এ ধরনের সামাজিক অপকর্ম থেকে রক্ষা করতে পারেন। অন্যদিকে সব অভিভাবকই যে এমন উদাসীন বা সন্তানদের নিয়ে সব সময় বেখেয়ালি আচরণ করেন এমনটা নয়। আমাদের সমাজে এমন অনেক গুণী অভিভাবক আছেন যারা কিনা নিয়মিত নিজের সন্তানের খেয়াল রাখেন, সন্তান কী করে, কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেশে, তার বন্ধুবান্ধব কারা, সন্তান বাইরে থেকে পড়াশোনা করলে নিয়মিত সেখানকার খোঁজখবর রাখা ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিয়মিত খেয়াল রাখেন। এগুলো অবশ্যই একজন আদর্শ অভিভাবকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সন্তানের প্রতি উদাসীন বা বেখেয়ালি না হয়ে সঠিক নিয়মকানুন মেনে বুঝিয়ে সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করা। আপনার একটু উদাসীনতা হতে পারে আপনার সন্তানের সারাজীবনের কান্না, আবার অভিভাবকদের সঠিক পরিচর্যা হতে পারে সন্তানের জন্য আশীর্বাদ। তাই সন্তানকে সার্বক্ষণিক সঠিক পরিচর্যার মধ্যে রাখা যেকোনো আদর্শ অভিভাবকের দায়িত্ব।

সন্তানরা যেমন একটি দেশের বা জাতির ভবিষ্যতের কাণ্ডারি, তেমনি একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকও সে কাণ্ডারিকে গড়ে তোলার কারিগর। বর্তমান আধুনিক যুগের অভিভাবকদের নানা কর্মব্যস্ততা, প্রযুক্তিনির্ভর জীবন এবং সন্তানদের অভিভাবকদের কথা মেনে না চলা অভিভাবক ও সন্তানদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করছে। তাই একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে সব অভিভাবকের উচিত নিজ নিজ সন্তানকে শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেওয়া এবং একজন আদর্শ সন্তান হিসেবে আমাদেরও উচিত অভিভাবকদের কথা মেনে চলা। সব অভিভাবকের উচিত নিজ নিজ সন্তানদের প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে অন্ধকারের হাত থেকে রক্ষা করা এবং প্রত্যেক সন্তানের উচিত অভিভাবকের কথা শুনে নিজেদের জীবন পরিচালিত করে উন্নতির শিখরে আরোহণ করা।


সাইদুল কবির স্বাধীন : শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়