লিঙ্গ সমতায় যৌথ উদ্যোগের অগ্রগতি

অড্রে লেসপেরেস
২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৯
শেয়ার :
লিঙ্গ সমতায় যৌথ উদ্যোগের অগ্রগতি

লিঙ্গ সমতা এবং নারী ও মেয়েদের অধিকার রক্ষায় আমরা কীভাবে এক ও সক্রিয় হতে পারি আর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে পারি? এটি হলো ‘নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্থ সম্মেলনে’র (ফোর্থ মিনিস্টারিয়াল কনফারেন্স অন ফেমিনিস্ট ফরেইন পলিসি) মূল প্রশ্ন, যে সম্মেলন ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সপ্তাহে। এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের সব অঞ্চলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা, সেই সঙ্গে সুশীল সমাজ, গবেষণা সংস্থা আর জনহিতকর ফাউন্ডেশনগুলো।

ফ্রান্স ২০১৯ সাল থেকে একটি নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে; উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক শাসন, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং মানবিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা ও নারীর অধিকারকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতি কেবল উঁচু আদর্শের বিষয় নয়: এটা বস্তুনিষ্ঠ রাষ্ট্রীয় নীতি ও দৃঢ় অংশীদারত্বের মেলবন্ধন।

সৌদি আরব ভিসন ২০৩০’র অধীনে এক উচ্চাকাক্সক্ষী রূপান্তরের কাজ হাতে নিয়েছে; জাতীয় আধুনিকায়ন কৌশলের একেবারে কেন্দ্রে রেখেছে নারীর ক্ষমতায়নকে। রাজ্যটি গত এক দশকে নজিরবিহীন মাইলফলক স্থাপনের রেকর্ড করেছে : কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছেÑ ২০১৬ সালের প্রায় ১৭ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে বেড়েছে ৩৬ শতাংশেরও বেশিÑ নারীরা এখন নেতৃত্বের জায়গা দখল করে আছে সরকার, কূটনীতি আর ব্যবসার ক্ষেত্রগুলোয়।

বর্তমানে সৌদি আরবের রয়েছে বারো জনেরও অধিক নারী রাষ্ট্রদূত; মানবাধিকার কমিশন আর সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ তাদাউলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোতেও নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরা। বেসরকারি খাতেও সৌদি নারীরা অর্থনীতি, জ¦ালানি ও প্রযুক্তিক্ষেত্রের বড় বড় কোম্পানিগুলোতে সভাপতির চেয়ার অলংকৃত করছে। নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি নারী।

ভ্রমণ, অভিভাবকত্ব আর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও সংস্কারের সূচনা করেছে রিয়াদ; সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকাকে অনুমোদন দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে। এসব পরিবর্তন থেকে দেখা যাচ্ছে, লিঙ্গ সমতা কীভাবে বিবর্তিত হতে পারে দ্রুত সামাজিক রূপান্তরের প্রাসঙ্গিকতায়; এবং নারীর নেতৃত্বকে উৎসাহিত করা ও বিশ্বমঞ্চে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে ফ্রান্স সম্মেলনে সৌদি আরব উচ্চকণ্ঠ হতে পারছে।

ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাজ গঠনে লিঙ্গ সমতা এবং নারী ও মেয়েদের অধিকার রক্ষাকে কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক প্রাধান্য হিসেবে গণ্য করেছে ফ্রান্স। গবেষণায় দেখা যায়, আলোচনা প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ আলোচনা ফলপ্রসূ করার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে মূলধারার লিঙ্গ সমতার নীতি অধিক কার্যকরভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলা সম্ভব করে তোলে, প্রবৃদ্ধি উজ্জীবিত করে আর সমাজের স্থিতিশীলতার শক্তি বাড়ায়।

ফ্রান্স গত মার্চ মাসে তার ‘নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতির আন্তর্জাতিক কৌশল’ উপস্থাপন করেছে। এই কৌশলের একটি কেন্দ্রীয় নীতি হলো, অধিকার এবং যৌনতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা। নতুন নতুন প্রাধান্যের বিষয় স্থান পেয়েছে, তা লিঙ্গ সমতাকে বসিয়ে দিচ্ছে সমকালীন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্সের পদক্ষেপের একেবারে কেন্দ্রে, যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আরও রয়েছে সংকট ও সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

ফ্রান্স তার নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে বেশ কিছু অগ্রবর্তী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে; সেসবের মধ্যে ‘নারীবাদী সংগঠনগুলোর জন্য সহায়ক তহবিল’ও (সাপোর্ট ফান্ড ফর ফেমিনিস্ট অর্গানাইজেশনস) রয়েছে, ৭৫টি দেশের ১ হাজার ৪০০টিরও বেশি সংগঠনকে সাহায্য করতে এটি উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালে। আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ল্যাবরেটরি ফর উইমেন’স রাইটস অনলাইন, এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ২০২৪ সালে। এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিকভাবে এটিই প্রথম, যেখানে আইডিয়া বিনিময় করা যায় এবং যেটা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় ইনকিউবেটর হিসেবে কাজ করে।

এসব উদ্যোগ আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অগ্রগতি অর্জন সত্ত্বেও এখনও বেশির ভাগ কাজ বাকি রয়ে গেছে। ইউএন উইমেন নামে জাতিসংঘ সংস্থার মতে, পরিবর্তন যে গতিতে এগোচ্ছে তাতে সারা পৃথিবীতে প্রকৃত লিঙ্গ সমতা অর্জন করতে প্রায় ৩০০ বছর লেগে যাবে।

লিঙ্গ বৈষম্য চলছে অবিরত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হচ্ছে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। বহু দেশে লাখ লাখ নারী শরীরের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যেখানেই সংকট কাঁপিয়ে দিচ্ছে সমাজের ভিত্তিÑ আফগানিস্তানে, ইরানে, গাজায়, ইউক্রেনে বা সুদানেÑ সেখানেই প্রথম বলি হচ্ছে নারীর অধিকার।

আন্তর্জাতিক অঙ্গন যখন বিক্ষত হয়ে আছে অর্থের জোগান না দেওয়ায় আর ক্রমেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অধিকারবিরোধী আন্দোলন, এমন এক সময়ে ‘নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্থ সম্মেলন’ নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতা রক্ষার এবং কোনো অনুকম্পা গ্রহণ না করার আমাদের অভিন্ন প্রত্যয়কে ফের আশ্বস্ত করবে। একসঙ্গে আমরা এগিয়ে যাব সামনের দিকে।

অড্রে লেসপেরেস : সৌদি আরবে নিযুক্ত ফ্রান্সের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স

নিবন্ধটি আরব নিউজ (২২ অক্টোবর ২০২৫) থেকে গৃহীত। অনুবাদ : আমাদের সময় ডেস্ক