গাফিলতি দূর করতে হবে

মার্কেট ভূতের বাড়ি
২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০৮
শেয়ার :
গাফিলতি দূর করতে হবে

বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে- ‘সরকারি মাল দরিয়ায় ঢাল’। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই প্রবাদ আমাদের দেশে যেন বাস্তব রূপ নিয়েছে। জনগণের করের টাকায় গড়ে ওঠা সরকারি সম্পদ ও অবকাঠামো প্রায়ই অপব্যবহার, অবহেলা ও অনিয়মের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়, অথচ জবাবদিহির অভাবে কেউ এর দায়ও নেয় না। এমনই একটি উদাহরণ- রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের প্যারিস রোডের মার্কেটটি।

প্রায় তিন দশক আগে রাজধানীর মিরপুরের প্যারিস রোডের পাশের সরকারি জমিতে একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় অবিভক্ত সিটি করপোরেশন। তা আজ পরিণত হয়েছে অপরাধীদের অভয়াশ্রমে। অথচ এটি চালু হলে এলাকাবাসীর জন্য হতে পারত আধুনিক বাণিজ্যকেন্দ্র এবং নগর কর্তৃপক্ষের বিশাল রাজস্বের উৎস। জনগণের অর্থে গড়ে ওঠা এই সম্পদ অব্যবহৃত পড়ে থাকা শুধু অব্যবস্থাপনার নমুনাই নয়, এটি সরকারের ও নগর কর্তৃপক্ষের দীর্ঘস্থায়ী গাফিলতির স্পষ্ট প্রমাণ।

এই মার্কেটের ২ হাজার ৩৬৩টি দোকান বরাদ্দের কথা থাকলেও তৎকালীন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে ৫ হাজারের বেশি দোকানের বরাদ্দপত্র বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। দোকান বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ ২০০৬ ও ২০১২ সালে দুদফা শুরু হলেও শেষ হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক মার্কেটটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। বুয়েটের প্রতিনিধিদল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়ে রেট্রোফিটিংয়ের পরামর্শ দেয়। ২০ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হলেও সেই কাজও আর এগোয়নি।

এখন ভবনটি শুধু অচল একটি অবকাঠামো নয়- এটি পরিণত হয়েছে এলাকার জন্য নিরাপত্তাজনিত হুমকিতে। ভবনের ভেতরে মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান, অবরুদ্ধ হয়ে আছে যান চলাচল।

এখানে প্রশ্ন শুধু একটি পরিত্যক্ত ভবনের নয়- প্রশ্ন জবাবদিহির। একটি সরকারি প্রকল্পে জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলো, কিন্তু দশকের পর দশক গেল তা চালু করা হলো না। দায় কার? বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিকল্পনা ছাড়া এমন প্রকল্প শুরু হয়নি, কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ছিল চরম। শুধু মামলা বা বরাদ্দ জটিলতার অজুহাতে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকতে পারে না।

একই সঙ্গে এই ঘটনার মাধ্যমে আরেকটি বড় সমস্যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে- নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার অভাব। প্রকল্প শুরু হয়, কিন্তু যখন সেটি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা দেখা দেয়, তখন কারও জবাবদিহি থাকে না। বরাদ্দ বাণিজ্যের অভিযোগ, তদারকির অভাব, প্রশাসনিক উদাসীনতা- সবকিছু মিলেই মার্কেটটি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

মার্কেটটির কাঠামোগত অবস্থা দ্রুত পরীক্ষা করে তা সংস্কারযোগ্য না ধ্বংসযোগ্য, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি ভবনটি রানা প্লাজার মতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে ভেঙে ফেলা জরুরি।

এত বছরের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।