ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা ও আধুনিকায়ন কাম্য

রিয়াদ হোসেন
২০ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা ও আধুনিকায়ন কাম্য

সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য , আমাদের দেশে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যার ফলে কোথাও কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে, যার কারণে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এ জন্য আমাদের ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

গত শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবং কয়েকদিন আগে ঢাকার মিরপুরে একটি রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় আগুন লাগে, যেখানে আগুনে পুড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। কোটি কোটি টাকার মালপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না রাজধানীর আশপাশে বা দেশের অনান্য শহরের কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে বা তাদের সক্ষমতা নিয়ে আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক রাজধানী ?চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি কারখানায় আগুন লেগে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়, যেখানে হাসপাতালে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরি করা হতো। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী এসে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। আর সর্বশেষ, ?হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগুন লাগে, যার ফলে কয়েক ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ থাকে। এখানে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনও তা নিশ্চিত হয়ে বলা যায়নি। এখানে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে। সঙ্গে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবাহিনীর ফায়ার ইউনিটও যোগ দেয়। মূলত বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অনেক জায়গায় লোকবল সংকটের পাশাপাশি আধুনিক এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম না থাকায় তারা দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। সরকারের এ বিষয়ে আরও নজর দেওয়া দরকার।

আমাদের দেশে বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক একটি প্রভাব ফেলছে। সঙ্গে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা ও জরুরি মোকাবিলা প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিভিন্ন কলকারখানায় আগুন লাগার ফলে সেখানের শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন। তারা বেকার হয়ে পড়ছেন। বিদেশি বিনিয়োগের ওপর মারাত্মক আঘাত আসছে। ফলে নানা দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এ জন্য ভবন নির্মাণ বা কলকারখানা চালু হওয়ার সময় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকমতো রয়েছে কিনা কিংবা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে কিনাÑ এসব বিষয়ে দায়িত্বশীলদের আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা দেখেছি, আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অনেক জায়গায় এখনও অনেক পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। এগুলো পরিবর্তন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অগ্নিদগ্ধ মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন তার জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ঝুঁকি ভাতা বা চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হতে হবে। অন্যদিকে নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যানজটের মধ্যে রাস্তায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দেখলে বা জরুরি শব্দ শুনলে অবশ্যই তাদের আগে যেতে দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

আমরা আশা রাখি, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জন্য বার্ষিক বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।


রিয়াদ হোসেন : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

মতামত লেখকের নিজস্ব