অবৈধ আয় নিয়ে ইসলাম যা বলে

সাইফুল ইসলাম সালেহী
১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২৩
শেয়ার :
অবৈধ আয় নিয়ে ইসলাম যা বলে

মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে ধনসম্পদ দিয়েছেন এবং মানুষকে তার চলার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি-শক্তিসহ সবকিছু দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও মানুষ খুশি নয়। মানুষ আল্লাহর আদেশকে ভুলে ও পরকালকে ভুলে শুরু করে দিয়েছে অবৈধ আয়। যারা সরকারি চাকরি করে তারা যে বেতন পায় তা দিয়ে খুব সুন্দরমতো সংসার চলে, কিন্তু তারা সম্মানজনক বেতন পাওয়ার পরও খুশি নয়। তারা ধনসম্পদ বাড়ানোর জন্য অবৈধভাবে আয় করে প্রচুর পরিমাণে ঘুষ খায় ও দুর্নীতি করে। তারা বিভিন্ন রকমের অবৈধ আয় করে জমা করে পাহাড় পরিমাণ ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সা। সরকারি যে কোনো অফিসে পিয়ন থেকে শুরু করে প্রধান অফিসার পর্যন্ত অবৈধ আয় করে। দুর্নীতির কারণে সমাজ, জনগণ ও দেশ উন্নত হচ্ছে না, দুর্নীতি যদি না থাকত তাহলে সমাজ, জনগণ ও দেশ আমেরিকার মতো হতো। আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আদেশ দিয়েছে : এবং তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধনসম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তা বিচারকের কাছে টোপ হিসেবে উপস্থাপন করো না যাতে তোমরা জ্ঞাতসারে লোকের সম্পদের অংশ অন্যায়ভাবে উদরস্থ করতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

আজ সমাজ ও দেশে দেখা যাচ্ছে মানুষ মানুষের ধনসম্পদ ও জায়গাজমি অন্যায়ভাবে দখল ও আত্মসাৎ করছে। এক ভাই আরেক ভাইয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করছে, ভাই বোনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করছে। গ্রামে ধানক্ষেতে দেখা যায় একজন আরেকজনের জমির আইল কেটে ফেলে ও জমি দখল করে। গ্রামগঞ্জে জায়গাজমি নিয়ে সব সময় ঝড়গা সৃষ্টি হয় ও মারামারি হয়। জায়গাজমি নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে থানা ও কোর্টে মামলা করে এবং প্রচুর অর্থ নষ্ট করে। সবাই যদি আল্লাহর আদেশ পালন করত ও প্রিয় নবীজির হাদিস মানত তাহলে একে অপরের জমি দখল করত না এবং মারামারি হতো না। এই অত্যাচারের কারণে আল্লাহর আদালতে আসামি হিসেবে হাজির হতে হবে। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কারও জমি এক বিঘত পরিমাণ অন্যায়ভাবে দখল করে নেবে, কেয়ামতের দিন সাত তবক (স্তর) জমিন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।

আজ সমাজে দেখা যাচ্ছে মানুষ প্রচুর পরিমাণে সুদ খাচ্ছে এবং সুদের টাকা দিয়ে ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সা জমা করছে। মানুষ এই অবৈধ আয় বেশি উপার্জন করছে। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন : হে ইমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের ওপর দ্বিগুণ সুদ ভক্ষণ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমরা সুফল প্রাপ্ত হও। (সুরা আল ইমরান, আয়াত-১৩০)

কিন্তু মানুষ আল্লাহর আদেশ শোনে না ও পরকালকে ভয় না করে বেশি বেশি সুদের টাকা দিয়ে ধনসম্পদ জমা করছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরকে, সুদদাতাকে, সুদের লেখককে, সাক্ষীকে। এবং তিনি বলেছেন, এরা সবাই সমান অপরাধী। (সহিহ মুসলিম, ৪১৭৭) আজ রাতের আঁধারে একে অপরের ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সা চুরি-ডাকাতি করে, এটা সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ। গ্রাম কিংবা শহরে বেশি চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে। বাসের মধ্যে পকেটমার ও ডাকাতি হচ্ছে। রাতের আঁধারে ছিনতাই হচ্ছে এবং মানুষ খুন হচ্ছে। বহু মানুষ চুরি-ডাকাতি করে এসব অবৈধ আয় করে ধনসম্পদ জমা করছে। আল্লাহ বলেন, আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও, তাদের অর্জনের প্রতিদানও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আজাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা মায়েদাহ, আয়াত-৩৮)

সমাজে অনেক মানুষ অবৈধভাবে ব্যবসা করে ধনসম্পদ উপার্জন করে। যারা এসব অবৈধ আয় করে তাদের জন্য পরকালে ভয়াবহ শাস্তি উপেক্ষা করছে, মৃত্যুর পর শাস্তি শুরু হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন : যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সঙ্গে থাকবে! কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কি? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে তাদের বেঁধে দেওয়া হবে লম্বা লম্বা খুঁটিতে। (সুরা হুমাযাহ, আয়াত-২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) আল্লাহপাক আমাদের সব ধরনের অবৈধ আয় করা থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী : ইসলামি গবেষক


আমাদের সময়/এইচও