দ্রুত ব্যবস্থা নিন

জ্বলছে না সড়কবাতি

সম্পাদকীয়
১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
দ্রুত ব্যবস্থা নিন

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েÑ বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগের সেতুবন্ধ। প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানী ঢাকাকে পদ্মা নদীর ওপারে বিস্তৃত ২১টি জেলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে। পদ্মা সেতু চালুর পর এই মহাসড়কের ওপর দেশের বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন ও যোগাযোগ নির্ভরতা বহুগুণে বেড়েছে।

মূলত অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় এই এক্সপ্রেসওয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য, মৎস্য, চামড়া ও পোশাক পণ্য দ্রুত রাজধানীতে পৌঁছাচ্ছে, যা রপ্তানি বাণিজ্যেও গতি এনেছে। পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি এসেছে। একই সঙ্গে পর্যটন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এই সড়ক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এখন একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ভাঙ্গা গোলচত্বর থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত চার কিলোমিটারজুড়ে রাতভর অন্ধকার বিরাজ করছে, কারণ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ার পরও যথাসময়ে তা মেরামত করা হয়নি। এ অবস্থায় চুরি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে গেছে।

জেনারেটরের সহায়তায় প্রতিরাতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আলো জ্বালানো হলেও সেটি যথেষ্ট নয়। বিশাল এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় এই স্বল্প সময়ের আলো নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। বাসিন্দাদের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, এটি নতুন কোনো সমস্যা নয়। এর আগেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিছুদিনের জন্য সমাধান হলেও আবারও সমস্যা ফিরে এসেছে। শুধু প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়Ñ বৈদ্যুতিক তার ও সরঞ্জাম চুরি হওয়া, বিল বকেয়া থাকা, এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়হীনতাই এ সমস্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করছে।

এ পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয়-বাংলাদেশে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তার রক্ষণাবেক্ষণে কতটা শৈথিল্য থাকে। অথচ এ মহাসড়কের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হলে সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

এমন পরিস্থিতির ভয়াবহ পরিণতি আমরা আগেও দেখেছি। রাজধানী ও এর আশপাশের সড়ক বা ফ্লাইওভার এলাকায় সড়কবাতি নিভে গেলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা চুরি, ছিনতাই, এমনকি ডাকাতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার বা কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকার অভিজ্ঞতা স্মরণ করা যায়Ñ যেখানে দীর্ঘদিন সড়কবাতি নিভে থাকার কারণে সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষকে আতঙ্কে চলাচল করতে হয়েছে।

মনে রাখতে হবে উন্নয়ন শুধু সেতু বা সড়ক নির্মাণে সীমাবদ্ধ নয়; এর কার্যকারিতা ধরে রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে এর সুফল হারানোর আশঙ্কা থাকে। বড় প্রকল্পের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। উন্নয়নের প্রকৃত সাফল্য তখনই ধরা দেয়, যখন একটি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলে, অর্থনীতিতে স্থিতি আনে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে কেবল সড়ক নয়Ñ এটি একটি অর্থনৈতিক করিডর, যা দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাই এ সড়ককে অরক্ষিত বা অবহেলিত অবস্থায় ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।