মানুষের সম্মানহানি পাপের কাজ

মুহাম্মদ সালমান শফী
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
মানুষের সম্মানহানি পাপের কাজ

কারও সম্মানহানি হয়, এমন কাজ করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। তাই ইসলামে গিবত, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ এবং কারও দোষ অন্বেষণে লেগে থাকা নিষেধ। কাউকে নিয়ে অকারণে ট্রল ও ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা কোনো ভদ্র মানুষের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভী জবাই করবে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ? সে বলল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।’ (সুরা বাকারা : ৬৭)

বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই একে অন্যকে ট্রল এবং ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যম ও বন্ধুমহলে একে অন্যকে নাম বিকৃত করে ডাকতে দেখা যায়। নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করার এই প্রবণতা দিন দিন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে ইমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ইমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো জালেম।’ (সুরা হুজুরাত : ১১)

ইসলামে কারও ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে হাসি-তামাশা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কটূক্তি ও সম্মানহানিকর কোনো কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। ঠাট্টা-বিদ্রƒপ এত নিকৃষ্ট কাজ যে, নবী কারিম (স.) এই কাজকে ‘দূষণ সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘কোনো এক সময় নবী কারিম (স.)-কে আমি একজন ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারও চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক।’ এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রƒপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত।’ (জামে তিরমিজি : ২৫০২)

কাউকে নিয়ে ট্রল করলে সেই ট্রলের শিকার আপনিও হতে পারেন। কারও বিপদ দেখে মশকরা করলে আপনিও সেই বিপদে পড়তে পারেন। হজরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার কোনো ভাইয়ের বিপদে তুমি আনন্দ প্রকাশ করো না, অন্যথায় আল্লাহ তাকে দয়া করবেন এবং তোমাকে সেই বিপদে নিক্ষিপ্ত করবেন।’ (জামে তিরমিজি : ২৫০৬)

আরেকটি বিষয় হলো, ইদানীং মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা জন্মেছে যে, শর্টকাটে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হলো ভিডিও কনটেন্ট তৈরি। এই ইচ্ছা থেকে বহু মানুষ নীতিনৈতিকতা, এমনকি ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে গিয়ে নানা কিসিমের ভিডিও তৈরিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে অনেকে বেছে নেয় ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরির পথ, যেখানে তারা বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি ব্যঙ্গ করে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণেও তারা এমনটি করে থাকে। অনেকে অন্য মানুষদের নিয়ে বিদ্রƒপ করে।

অথচ পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লুকমান : ৬)

আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।


মাওলানা মুহাম্মদ সালমান শফী : ইমাম ও খতিব, দারোগা আমীর উদ্দিন ঘাট মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা