ছাত্র সংসদ জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ভিত্তি

মশিউর রহমান
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ছাত্র সংসদ জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ভিত্তি

ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্র নয়, বরং এটি জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির অন্যতম ভিত্তি। তাই এ ধরনের নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিকভাবে হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই আলোচিত একটি বিষয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন শিক্ষাঙ্গনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। তবে এ দুই নির্বাচনের প্রক্রিয়া, ফলাফল এবং প্রতিক্রিয়া তুলনা করলে কিছু মিল যেমন পাওয়া যায়, তেমনি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও।

প্রথমত, ভোটার অংশগ্রহণে উভয় নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল যথেষ্ট। ডাকসু নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায় এবং ভোটগ্রহণে অংশগ্রহণের হার ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ। অপরদিকে জাকসু নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও প্রায় ৬৮-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোটে অংশ নেয়। এটি প্রমাণ করে, শিক্ষার্থীরা এখনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখে। তবে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে দুটির মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দ্রুত ফল ঘোষণা করা সম্ভব হলেও জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনায় জটিলতা দেখা দেয়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে ফলাফল আটকে রাখা, ভোট বর্জন ও অনিয়মের অভিযোগ, এমনকি একজন শিক্ষক পদত্যাগ করায় জাকসুর নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক বাড়ে। অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনে কিছু অভিযোগ থাকলেও তুলনামূলকভাবে প্রক্রিয়াটি ছিল সুশৃঙ্খল।

আরেকটি দিক হলো প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা। ডাকসুতে বিভিন্ন সংগঠন ও প্যানেল সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও জাকসুতে কয়েকটি প্যানেল ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই বর্জন করে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুটা সীমিত হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি শিক্ষা পাওয়া যায়। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ থাকতে হবে। ভোট গণনায় আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে জটিলতা কমবে। দ্বিতীয়ত, ছাত্ররাজনীতিকে শুধু দলীয় স্বার্থে সীমাবদ্ধ না রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীর সমস্যা ও চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচন যেন আস্থার সংকটে না পড়ে, সেজন্য সব পক্ষকে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি বলা যায়, ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি আস্থা জাগাতে সক্ষম হলেও জাকসু নির্বাচন কিছু অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। তবুও এই দুটি নির্বাচনই প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায় এবং তাদের প্রত্যাশা হলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুতি ও সংস্কার জরুরি। যদি নির্বাচনে অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব বা জবরদস্তি থাকে তবে শিক্ষার্থীদের আস্থা ভেঙে যায়, নেতৃত্ব বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা নেতৃত্ব সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল হয়, যা দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।

অতএব ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও প্রতিচ্ছবি। তাই দেশের মানুষের একান্ত চাওয়াÑ প্রতিটি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক।


মশিউর রহমান : শিক্ষক, (ইংরেজি) আছমত আলী খান (এ. কে) ইনস্টিটিউশন, বরিশাল