ব্যবসা কমেছে জীবন বীমায়

আবু আলী
০৬ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ব্যবসা কমেছে জীবন বীমায়

দেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কমেছে। বিপরীতে সাধারণ বীমা খাতের বিনিয়োগ ও সম্পদের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বীমা শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরজুড়ে ব্যবসায়িক পরিবেশ বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল কঠিন। নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করা যেমন কঠিন ছিল, তেমনি কিছু পুরনো গ্রাহকও প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সব কোম্পানির পরিস্থিতি একরকম ছিল না, কিছু প্রতিষ্ঠান অনিশ্চয়তার মাঝেও ভালো করেছে।

জানা গেছে, দেশের জীবন বীমা খাতে ২০২৪ সালে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয়েছে ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় আয় কমেছে প্রায় ৭ কোটি। ২০২৩ সালে প্রিমিয়াম আয় হয়েছিল ১২ হাজার ২৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ডে জমা পড়েছে মাত্র ৪১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের অর্ধেকের কম।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, বিশ^াস হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। বীমা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ ছাড়া ছোট অর্থনীতির জন্য এত বীমা কোম্পানি দরকার আছে কিনা- তা দেখার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট রেগুলেটরি অথরিটিকে আন্তর্জাতিক চর্চার মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে গ্রাহকের দাবির বিপরীতে সঞ্চিত লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা।

বিদায়ী বছরে ব্যবসার দিক থেকে শীর্ষে ছিল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ। কোম্পানিটি ২০২৪ সালে প্রিমিয়াম আয় করে ৩ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিট আয় ৩ হাজার ৩০৪ কোটি। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের বিদায়ী বছরে ২ হাজার ১০১ কোটি প্রিমিয়ামের মধ্যে নিট আয় হয়েছে ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।

তৃতীয় স্থানে ছিল ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম বাবদ আয় করেছে ৯৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিট প্রিমিয়াম আয় ৯১০ কোটি। সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রিমিয়াম আয় ৮৬০ কোটি টাকা। ৩ হাজার ১৩৪ কোটির সম্পদের কোম্পানিটির প্রকৃত প্রিমিয়াম আয় ৮৪৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া পঞ্চম স্থানে রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি বিদায়ী বছরে আয় করেছে ৭৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিট আয় ৭৯৪ কোটি টাকা। সম্পদের পরিমাণ ৯৯৭ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘জীবন বীমা খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গ্রাহকের আস্থার অভাব। যারা আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে, তারাই ভালো করছে। ক্লেইম সময়মতো না মেটানো হলে আস্থার সংকট তৈরি হয়, যা অন্যান্য গ্রাহকের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। সময়মতো ক্লেইম পরিশোধ করতে পারলে নতুন গ্রাহক পাওয়া সহজ হয়, যা প্রিমিয়াম সংগ্রহে সহায়ক।’ জানা গেছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ জীবন বীমা কোম্পানিগুলো প্রায় ৩৪ শতাংশ ক্লেইম পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। অন্যদিকে, নন-লাইফ বীমা খাতে ৬৮ শতাংশ ক্লেইম এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ফলে বহু পলিসি হোল্ডার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।