আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ জরুরি

এক মাসে সহিংসতায় নিহত ২৫

সম্পাদকীয়
০২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ জরুরি

পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি ও সমাজ- সবখানেই সহিংস ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি গণপিটুনি ও রাজনৈতিক সহিংসতায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে ও ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে মব সন্ত্রাস তৈরি করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে- চলতি বছরের জুলাই মাসে গণপিটুনি ও রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে মব সৃষ্টি করে (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) বা গণপিটুনি দিয়ে ১৬ জন এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯ জন নিহত হয়েছে। জুনে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল ৪৫টি, জুলাইয়ে তা বেড়ে হয়েছে ৪৮টি। জুলাইয়ে ৩৫২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। মাসজুড়ে ধর্ষণের ঘটনা ৫৬টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৮টি, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে সাতটি। জুলাইয়ে ৫১টি অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ পাওয়া গেছে। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণু মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলছে- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে মব সহিংসতা বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে। যারা মব সহিংসতা তৈরি করে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিনা বিচারে কাউকে মারা অপরাধ হলেও গণপিটুনির ঘটনা তদন্তে অনেক সময় পুলিশের মধ্যে দায়সারা ভাব দেখা যায়। দুর্বল তদন্ত ও পুলিশি গাফিলতির কারণে গণপিটুনির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মামলায় শাস্তির নজির নেই বললেই চলে। ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাচ্ছে আরেক অপরাধীচক্র; গণপিটুনির ফাঁদে ফেলে মারধর ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। ফলে নিরপরাধ মানুষও ফাঁদে পড়ে মারধর ও হত্যার শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের কঠোর আইনগত ব্যবস্থার মুখোমুখি করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের ১১ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও মব ভায়োলেন্স বন্ধ হচ্ছে না, বরং দিন দিন তা প্রকট আকার ধারণ করছে। এখন যা হচ্ছে তা অনেকাংশে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য সংঘটিত হচ্ছে। সহিংস ঘটনা ঘটছে নারীর প্রতিও। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল প্রতিবাদ মিছিলে। সেই নারী আজ চরম অবমাননা ও লাঞ্ছনার শিকার। আক্রমণের শিকার হচ্ছে বাউল ও বয়াতিরাও। মাজারে হামলা হয়েছে অসংখ্য। গঙ্গাচড়ায় ধর্মে অবমাননার অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকে বাড়িছাড়া। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা হতাশাব্যঞ্জক।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, তা দৃশ্যমান নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ববান ব্যক্তিরা বলেছিলেন, মব সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে, আর হবে না। কিন্তু আজও বন্ধ হয়নি। তাই বলব, দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিন, যাতে মানুষের মনে ভয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কেটে যায়। সরকারের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মব প্রতিরোধ করা এবং জনগণের ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।

এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল, প্রশাসন এবং জনগণ- সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের একটি সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তা হলেই সুশাসন, স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো গণপিটুনি ও রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধ করা। আর সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চায় দেশবাসী। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলে যেন কোনো অপরাধী আশ্রয় না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। জনগণকেও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নিরাপদ ও শান্তির পরিবেশ, নারী ও শিশুর বাসযোগ্য বাংলাদেশ।