রাজনীতিকে নারীর জন্য আরও কঠিন করে তোলা হচ্ছে -সামিনা লুৎফা

সাক্ষাৎকার

এমিলিয়া খানম
৩১ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
রাজনীতিকে নারীর জন্য আরও কঠিন করে তোলা হচ্ছে -সামিনা লুৎফা

ড. সামিনা লুৎফা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের সময়ের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- এমিলিয়া

আমাদের সময় : এক বছর পর আপনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

সামিনা লুৎফা : গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যে ধরনের দায়িত্বশীল এবং ইনোভেটিভ আচরণ আশা করেছিলাম তা পাওয়া যায়নি। বিশালসংখ্যক তরুণ রাজনীতিতে আসতে চেয়েছে বা এসেছে। তাদের চাওয়া ও তাদের ভাষা রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের যেভাবে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগনো যেত, সেই জায়গাটা তৈরি করে দেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের নানা জায়গায় নানা রকম সংঘবদ্ধ কার্যকলাপের মধ্যে দেখেছি। এর মধ্যে হিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতা আছে। রাজনৈতিক দলগুলো আদর্শিকভাবে তাদের তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ধরনের সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী কীভাবে জাতীয় রাজনীতিতে অভিঘাত সৃষ্টি করবে তা পরিষ্কার হয়নি। রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে অনেক অস্থিতিশীলতা আছে। এত বড় গণ-অভ্যুত্থান হয়ে যাওয়ার পর সেটা খুব অস্বাভাবিকও নয়। এত বছর ধরে একটা প্রবল স্বৈরাচারী সরকার ছিল। সে সময় তাদের শিকড় থেকে শুরু করে গাছের আগা পর্যন্ত ছিল দুর্নীতি। দুর্নীতি সমর্থনকারীরা নানাভাবে খুন-গুম করেছে, অন্যায় কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। তাদের একে অপরের সঙ্গে ছিল এক ধরনের নির্ভরতার চুক্তি। পতন হওয়ার পর পুরো কাঠামোরই পতন হয়েছে। এতে রাজনীতিতে এবং দেশ পরিচালনায় বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সাধারণত বড় অভ্যুত্থানের পরে যে শূন্যতা তৈরি হয় তার মধ্যে এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।

আমাদের সময় : এর মধ্যে এক বছর কিন্তু পার হয়ে গেছে।

সামিনা লুৎফা : আমি আসছি এ কথায়। এক বছর পার হয়ে যাওয়ার ফলে যেটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে রাজনৈতিক মহলে হাজির হওয়া দরকার সেটা হাজির হচ্ছে না। মূল বিষয় হয়ে উঠছে নির্বাচন। মূল বিষয় এটা হচ্ছে না যে কী কারণে গণ-অভ্যুত্থানটা হয়েছিল। সে জায়গাগুলো সমাধান করার চেষ্টার চেয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কে, কীভাবে ক্ষমতা নেবে তা মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই এই অবস্থাটার সুযোগ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ তো বিশাল বড় রাজনৈতিক দল। তারও তো অসংখ্য সমর্থক রয়ে গেছে, যারা এ সমাজের ভেতরেই রয়েছে। এখন ঘৃণা উৎপাদন হতে থাকবে। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় আছে, যদি ঠিকঠাক তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় নেওয়া না যায়, তাহলে ঘৃণাটা সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা আছে।

আমাদের সময় : এরই মধ্যে কি ঘৃণাটা ছড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন না?

সামিনা লুৎফা : সেটাই কিন্তু আমরা দেখছি। যেহেতু ট্রুথ কমিশন হয়নি, যেখানে এসে মানুষ তাদের অবস্থান কেন ওরকম ছিল, কী ছিল, কেন ছিল, তারা কেন এ রকম করেছে- এসব নিয়ে কথা বলতে কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। বরং এক ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতা চারদিকে দেখা যাচ্ছে। যে কারণে নানা ধরনের অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা লক্ষ করছি। ঘৃণাটা সমাজের দেহে ছড়িয়ে গেছে। ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি, ন্যায়বিচারের রাস্তা তৈরি হয়েছে- তেমন কিছুও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আছি আমরা। এর একটা বড় দায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই আসে। কারণ তারাই ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকার কারণে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের। জননিরাপত্তার প্রতি হুমকিগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করাও তাদের কাজ। তারা তা না করে জনগণের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। এটা দেশের নিরাপত্তার জন্য, শান্তিশৃঙ্খলার জন্য সব অর্থেই সমাজে এক ধরনের প্রতিশোধপরায়ণ ও সহিংস পরিস্থিতি তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। এ কারণেই এক বছর পরে এসে খুব আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে রাজনীতিতে।

আমাদের সময় : আপনি কি কোনো ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন?

সামিনা লুৎফা : দুটি পরিবর্তনকে আমাদের খুব ভালোভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। একটি হচ্ছে তরুণদের জেগে ওঠা, যা শুরুতেই বলেছি। অর্থাৎ তরুণরা নতুনভাবে রাজনৈতিক জাগরণ ও সচেতনতার মধ্যে রয়েছে। যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার সংস্কৃতি চালু করেছে। সেই সংস্কৃতি আমাদের বলে দেয়, তারা একটা জাগরিত অবস্থায় আছে। এ অবস্থাটাকে আমাদের সম্মান জানাতে হবে। এটা রাজনৈতিক এবং সামাজিক- উভয় ক্ষেত্রেই ভালো জিনিস, যদি দেশ গড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। একজন আরেকজনের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে বা অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের অভাবে বা ভুল তথ্যের কারণে নানা বিষয়ে তারা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। তাদের উত্তেজিত করাও হচ্ছে। অথচ তারা যদি মনে করে যে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়, যারা আবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করাতে সাহায্য করবে। জাগ্রত তরুণ সমাজ যে কোনো সমাজের জন্যই ইতিবাচক। কারণ, তারাই তো পরের ৪০/৫০ বছর এ সমাজকে চালাবে।

আমাদের সময় : দ্বিতীয়টি?

সামিনা লুৎফা : দ্বিতীয়টি নারীদের নিয়ে। নারীরা যে কোনো আন্দোলনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বায়ান্ন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনেই এটা দেখা যায়। এও দেখা গেছে, ভূমিকা রাখার পর আন্দোলন শেষে তারা ঘরে ফিরে যান। এবার সেটা করেননি নারীরা। এবার তারা তাদের হিস্যা চাচ্ছেন এবং সবখানেই চাচ্ছেন। রাজনীতিতে, সমাজে, মঞ্চে- সব জায়গায়। যদিও তাদের বিরুদ্ধে প্রচুর সহিংসতা হচ্ছে। বিশেষ করে অভ্যুত্থানের পর সাইবার বুলিংয়ের সবচেয়ে বড় শিকার নারীরা। এটা উভয় দিক থেকে হচ্ছে। একদিকে পতিত আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন, আবার ভিন্ন রাজনীতির মতাদর্শ ধারণকারীরাও একই কাজ করছেন। ফলে রাজনীতিকে নারীর জন্য আরও বেশি কঠিন করে তোলা হচ্ছে। তার পরও রাজনীতি থেকে নারীদের ইচ্ছাটাকে তারা থামাচ্ছে না। এসব পার করেও নারীরা রাজনীতিতে থাকতে চাচ্ছেন। এটাকে আমি খুবই ইতিবাচক বলে মনে করি। তবে রাজনীতিতে নারীদের আসার যে ঝোঁক, এই জায়গাটাকে রাজনীতি করা দলগুলো যথাযথভাবে অনুমান করতে পারছে না বলে আমি আশঙ্কা করছি। যে কারণে তারা ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ অফার করছে। তারা আসলে পুরনো চিন্তার মধ্যে আছে। যেখানে নারীরা আন্দোলনে বুক চিতিয়ে গুলির সামনে দাঁড়িয়ে গেছেন, সেই নারীরা পারবেন না- এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। যদি এটা তারা স্বীকার না করতে চায়, তাহলে তারা পুরনো বন্দোবস্তেই ফেরত যেতে চায়।

আমাদের সময় : বিরোধী কণ্ঠের প্রতি রাষ্ট্রের সহিষ্ণুতা ও জনমতের জায়গা কেমন বলে আপনি মনে করনে? পরিস্থিতি কি বদলেছে?

সামিনা লুৎফা : একটু আগে আমি দেখতে পেলাম- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কয়জন ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ হলের নাম পরিবর্তন করার বিষয়ে তারা প্রতিবাদ করেছিল। আমার কথা হচ্ছে যে, নাম পরিবর্তন না হতে পারে। এটা নিয়ে ফেসবুকে লিখতেই পারে। তার জন্য যদি শাস্তি দিতে হয় বা আন্দোলন-সংগ্রাম করার জন্য বহিষ্কার করে দিতে হয়, তার মানে আমরা তো কোথাও এগোইনি। একই জায়গায় আছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই না বোঝে, তাহলে কার কাছ থেকে আশা করব? বোঝা যাচ্ছে, যদি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেন, ঠিক কথাটা বলেন, তাহলে আপনাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হবে। আগে জনমত প্রকাশের বিরুদ্ধে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হতো এখন তা থেকে একটু ভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে যেমন ধরে নিয়ে গুম করে ফেলত বা মামলা দিয়ে দিত, এখন চারদিক থেকে এ রকম সাইবার আক্রমণ হয়, বিশেষ করে আপনি যদি নারী হন তাহলে তো কথাই নেই। মানুষ তাই কথা বলার আগে অনেক চিন্তা করছে। আগে রাজাকার ট্যাগ খেতে হতো, এখন তার উল্টোটা হয়েছে। এখন হচ্ছে শাহবাগী বা আওয়ামী দোসর। যদি বলেন- এটা ঠিক হয়নি, সঙ্গে সঙ্গে একদল মানুষ ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ বলে হাজির হয়ে যাবে। একজন জুলাই যোদ্ধাকেও আওয়ামী দোসর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের কোনো কাজের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে কিন্তু জুলাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলা না। আমরা দেখেছি, অভ্যুত্থানে যারা নিহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তাদের পরিবার পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বা তাদের তালিকা করার ক্ষেত্রেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সরকার এখনও জুলাই সনদ করতে পারেনি। তাহলে সরকারের বিরোধিতা কেন করা যাবে না? সরকারের বিরোধিতা করলে জুলাইয়ের বিরোধিতা কী করে হয়, তা আমি বুঝি না।

আমাদের সময় : গণমাধ্যমের ভূমিকা বর্তমান সময়ে কেমন? তা কি ক্ষমতার পক্ষে নাকি জনগণের পক্ষে কাজ করছে?

সামিনা লুৎফা : সংবাদমাধ্যম তো শিল্প। সংবাদমাধ্যম জনগণের পক্ষে কথা বলার ম্যান্ডেট নিয়ে তো আসেনি। এটা একটা মুনাফা তৈরির জায়গায়ও বটে। সংবাদমাধ্যম তো গণমাধ্যম নয়। সেই অর্থে যদি বলা হয়, যে পরিমাণ পুঁজি সংবাদমাধ্যমের পেছনে লগ্নি করতে হয়, সংবাদমাধ্যমের মালিকরা তা ফেরত চান এবং সেটাই হয়। ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোতে যখন জনসাধারণ রাস্তায় নেমে আসে এবং জনসাধারণই তাদের পাওনাটা দাবি করে, তখনই সংবাদমাধ্যম জনগণের পক্ষে থাকে। অন্য সময় সংবাদমাধ্যম স্টাবলিশমেন্টের পক্ষে থাকে। সংবাদমাধ্যম এখনও তাদের পক্ষে আছে, এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। মালিক বা সম্পাদক পরিবর্তন হয়ে গেলেও ক্ষমতাকে সার্ভ করার জায়গাটায় পরিবর্তন হয়নি।

আমাদের সময় : মব সন্ত্রাস কেন হচ্ছে? এটা কি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে না? কীভাবে এটা দূর করা যায়?

সামিনা লুৎফা : আসলে যদি আপনি সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন তাহলে মানুষ নিজের হাতে বিচারবহির্ভূত কাণ্ডকারখানা করবে। প্রত্যেকটাই বিচারবহির্ভূত সহিংসতা। বিচারের জন্য প্রক্রিয়া আছে। অথচ এখন নিজেই অভিযোগ তুলছে, নিজেই বিচার করছে, নিজেই বাস্তবায়ন করছে। এগুলোর কোনোটাই নাগরিকদের করার কথা নয়। যিনি অভিযুক্ত তারও আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ থাকতে হবে। সেটা তার অধিকার। চিহ্নিত আসামিকেও নিদিষ্ট নিয়ম না মেনে শাস্তি দেওয়া যায় না। কেউ যদি চিহ্নিত আসামিও হন, তার পরও তার মানবাধিকার আছে। আমরা যখন আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড দেখেছি, তখন যে রাগ ও ক্ষোভ আমাদের হয়েছে, একই জিনিস কিন্তু অন্য আরেকজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হলেও হওয়ার কথা। সেটাই ন্যায়বিচার। মব অর্থাৎ সংঘবদ্ধ সহিংসতা থামাতে হবে। থামানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে, যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে সেটাকে থামিয়ে দেওয়া এবং তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা।

আমাদের সময় : একদিকে চাঁদাবাজি ও আরেকদিকে তদবির বাণিজ্য। এ দুইয়ের কবল থেকে বাংলাদেশের মুক্ত হওয়ার উপায় কী?

সামিনা লুৎফা : প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। এ জন্য নাগরিকদের প্রবল ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে। আমরা এর আগে একটা জিনিস দেখেছি যে, আন্দোলন হয়েছে, পরিবর্তন এসেছে, যার যার মতো ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করেছি। ভেবেছি যারা সরকারে গেছে, ক্ষমতায় গেছে তারা সবকিছু বদল করে ফেলবে। আসলে ক্ষমতায় থেকে সবকিছু বদলানো যায় না। কারণ ক্ষমতার আমরাও অংশ। সুতরাং নাগরিকরা যদি সচেতনভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রতিরোধ না করে, যদি তারা এটা নিয়ে সচেতনভাবে কথাবার্তা বা লেখালেখি না করে তাহলে যারা ক্ষমতায় আছে তারা তো ক্লিনশিট পেয়ে যায়। তারা ভাবে- আমি তো সবকিছু পারবই। এই জায়গাটা জরুরি যে নাগরিকদের সজাগ থেকে প্রতিরোধ করা।

আমাদের সময় : শালীন পোশাক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ এবং পরবর্তী পর্যায়ে তা প্রত্যাহার নিয়ে আপনি কী বলবেন।

সামিনা লুৎফা : পোশাকের বিষয়ে যেটা বলব, এটা একটা খুবই জেন্ডার নির্দেশনা ছিল। জনগণের সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে যারা কাজ করেন ফরমাল পোশাক মানে কী এটা ওনারা জানেন। সুতরাং আলাদা করে মেসেজ চালাচালি বা এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করার প্রয়োজনীয়তা কী? যখন আমরা দেখি, মেয়েদের জন্য আলাদা করে হাফস্লিভ কাপড় পরা যাবে না- এগুলো বলা হচ্ছে, এগুলোর এক ধরনের অভিঘাত তৈরি হয়। এটা অন্যরা ব্যবহার করার সুযোগ পায়। যেহেতু রাষ্ট্র করছে তাহলে আমি কেন করব না।

আমাদের সময় : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছাত্রদের সঙ্গে আপনাকেও দেখা গেছে। একই পরিস্থিতি আবার তৈরি হলে আপনি কি মাঠে থাকবেন?

সামিনা লুৎফা : এ রকম পরিস্থিতি হলে আমাকে না পাওয়ার কী আছে। ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছিল, আমি রাস্তায় নেমেছিলাম। পরে এ রকম হলে আবার নামব।