ছোটবেলা থেকেই সাগরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন

নিহত পাইলটের বাড়িতে মাতম

রাজশাহী ব্যুরো ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২২ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ছোটবেলা থেকেই সাগরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন

ঢাকার উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর ছোটবেলা থেকেই চেয়েছিলেন পাইলট হতে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করে সংসারও শুরু করেছিলেন। কিন্তু আকস্মাৎ দুর্ঘটনায় স্বপ্নের পেশা আর সংসার ছেড়ে পরপারে চলে যেতে হলো তাকে। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গতকাল সোমবার বিকালে রাজশাহীর বাড়িতে উপস্থিত স্বজনরা এসব বলে বলে আহাজারি করছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজশাহী মহানগরীর উপশহরের বাসা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরে বিকালে বিমানবাহিনীর পাঠানো হেলিকপ্টারে করে সাগরের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রাজশাহী মহানগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকে সাগরের পরিবার। দুপুরের পর থেকে বাসাটিতে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করতে থাকেন। এ সময় সাগরের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। তবে দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সাগরের মৃত্যুর বিষয়টি বাবা-মাকে জানানো হয়নি।

নিহত পাইলট সাগরের চাচা তাসদিকুল ইসলাম বিকালে আমাদের সময়কে বলেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পেয়েছি। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার রাজশাহী এয়ারপোর্টে পাঠানো হয়। সেই হেলিকপ্টারে করে সাগরের বাবা তোহরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন ও ছোট বোন বৃষ্টিকে নিয়ে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। এর আগে র‌্যাবের একটি গাড়ি এসে তাদেরকে বিমানবন্দরে নিয়ে যায়।

তাসদিকুল ইসলাম জানান, মাস ছয়েক আগে সাগর বিয়ে করেন। সর্বশেষ ১৫ দিন আগে তিনি রাজশাহী উপশহরে বাসায় এসেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন নম্র, ভদ্র ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী। তার স্ত্রী ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। সাগর পাবনা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কৃষ্ণচন্দ্রপুরের বাড়িতে আত্মীয়দের আহাজারি করতে দেখা যায়। সেখানে সাগরের মামা শওকত আলী আমাদের সময়কে বলেন, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সাগরের ইচ্ছে ছিল পাইলট হবে। কিন্তু সাগরের মা-বাবা চেয়েছিলেন ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ছেলে সেনাবাহিনীর অফিসার পদে চাকরি করুক। কিন্তু সাগর পাইলটের চাকরিই বেছে নেয়।

শওকত আলী জানান, সাগরের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে তারা গ্রামের বাড়ি আসেন। এক বছর আগে সাগর গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। এরপর আর আসেননি। কিছুদিন আগে সাগর বিয়েও করেছেন। তার স্ত্রী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।

সাগারের মামা আরও বলেন, সাগরের বাবা তোহরুল ইসলাম আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন। মা সালেহা বেগম গৃহিণী। সাগরের একমাত্র বোন তাসমিয়া ইসলাম সৃষ্টি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। দাদা-দাদি মারা গেছেন। নানা-নানি বেঁচে আছেন।

স্বজনরা জানান, তৌকির ইসলাম সাগর ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত রাজশাহীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে গিয়ে ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে চাকরিতে যোগ দেন।

সাগরের মামা শওকত আলী জানান, সাগরের লাশ কোথায় দাফন করা হবে এ বিষয়ে এখনও (গতকাল সন্ধ্যা) কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে মৃত্যুর খবর জানার পর সাগরের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা ঢাকায় রওনা হয়েছেন।

সাগরের আরেক মামা সেলিম জানান, বিমানবাহিনীর এক সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে তারা প্রথম জানতে পারেন দুর্ঘটনার খবর। পরে ঢাকায় থাকা সাগরের দুই চাচা ও তিনি ছুটে যান সিএমএইচ হাসপাতালে। বর্তমানে তারা সিএমএইচ হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন ভাগ্নের লাশ গ্রহণের।