প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপর নাম সীতাকুণ্ড

নাফীজ আহম্মেদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
০৫ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপর নাম সীতাকুণ্ড
ছবি : ছবি- তাসনিম আলম

চট্টগ্রামের এক মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নাম সীতাকুণ্ড। পাহাড়, ঝরনা আর সবুজে মোড়ানো এই এলাকাটি বহু প্রকৃতিপ্রেমীর আকর্ষণের কেন্দ্র। সম্প্রতি আমি সুযোগ পাই সীতাকুণ্ড পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার আর এই অভিজ্ঞতা আমাকে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিক ও আত্মিকভাবেও এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

পাহাড়ি পথে রোমাঞ্চ ও ক্লান্তি- পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে যখন ওপরে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন সামনে তাকিয়ে চূড়ার উচ্চতা দেখে কিছুটা শঙ্কা হলেও মনের মধ্যে ছিল এক ধরনের রোমাঞ্চ। আমরা হাঁটা শুরু করি সরু পাহাড়ি পথ ধরে। প্রথম দিকে পথ ছিল সহজ, কিন্তু যতই ওপরের দিকে উঠতে থাকি, ততই তা কঠিন হয়ে ওঠে একদিকে খাড়া ঢাল, অন্যদিকে পিচ্ছিল পাথর। পথে যেতে যেতে চোখে পড়ে প্রকৃতির অপরূপ রূপ। পাখির কলতান, ছোট ছোট ঝরনার শব্দ আর গাছের পাতায় সূর্যের আলো পড়ে যে চিত্র আঁকে, তা যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। মাঝে মাঝে থেমে শ্বাস নিতে নিতে নিচের দিকে তাকালে দেখা যেত গ্রাম, বন আর নীল সমুদ্রের এক অপূর্ব মিশ্রণ।

চূড়ায় দাঁড়িয়ে আত্মজাগরণ- চূড়ার কাছাকাছি পৌঁছতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু মনের মধ্যে ছিল এক তীব্র আকর্ষণÑ চূড়ার সেই শেষ ধাপ ছুঁয়ে ফেলার। অবশেষে প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছে যাই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায়। ওপরে ওঠে যে দৃশ্যটি দেখলাম, তা কোনো লেখনীর মধ্যেই পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। চারপাশে মেঘের আনাগোনা, নিচে পাহাড়ি অঞ্চল আর দূরের সমুদ্র যেন একসাথে এক মহাকাব্য রচনা করছে।

পাহাড় আর জীবনের মিল- চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হলো, মানুষের জীবনের পথও এই পাহাড়ি পথের মতোই কখনও সহজ, কখনও কঠিন; কখনও পিচ্ছিল, আবার কখনও সোজাসাপ্টা।

পরিশেষে, সীতাকুণ্ডের এই ভ্রমণ কেবল একটি পাহাড় চূড়ায় ওঠার স্মৃতি নয়; এটি ছিল প্রকৃতির মাঝে স্রষ্টার মহত্ত্ব অনুধাবনের এক অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির বিশালতা মানুষকে ছোট করে, আর আল্লাহর মহত্ত্বকে বড় করে তোলে। এ সফরের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

একটি সতর্কবার্তা- ঢাকা থেকে আমরা রাত ১২টা নাগাদ রওনা হই সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে। গন্তব্য চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ের চূড়া। কিন্তু ভ্রমণের শুরুতেই ঘটে যায় একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ট্রেনযাত্রার সময় আমার একটি ব্যাগ হারিয়ে যায়। সম্ভবত কারও হাতে পড়ে যায় বা অসাবধানতায় নিচে পড়ে যায়। সেই ব্যাগে ছিল কিছু দরকারি জিনিস চার্জার, শুকনো খাবার, একটি নোটবুক ইত্যাদি।

এই ঘটনা আমাকে একটি বড় শিক্ষা দিয়েছে : ভ্রমণের সময় বিশেষ করে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচলের সময় জিনিসপত্রের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এক মুহূর্তের অসাবধানতা একটি পুরো সফরের প্রস্তুতিকে বিঘ্নিত করতে পারে।