ইউনূস সরকারের সফলতা বনাম ব্যর্থতা

মেজর আহমেদ ফেরদৌস
০৭ জুন ২০২৫, ১০:৫৩
শেয়ার :
ইউনূস সরকারের সফলতা বনাম ব্যর্থতা

অনেক রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ২য় স্বাধীনতা ২০২৪ এর ৩৬ জুলাইয়ে। ১/১১ পরবর্তী বাংলাদেশে জেঁকে বসে ফ্যাসিজমের প্রেতাত্মা। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয় রাতের ভোট ও ডামি নির্বাচন দিয়ে। আমাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে। মুক্ত চিন্তা হরণ করতে গুম খুনের সংস্কৃতি চালু করে পতিত স্বৈরাচার। বাকশালী আচরণে জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ পরিণত হয় এক নরকে। স্বাধীন হয়েও যেন পরাধীনতার জালে আটকে ছিল বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণ। 

গনঅভ্যুত্থান

জুন ২০২৪ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন পীড়নে আস্তে আস্তে তা দানা বাঁধে স্বৈরাচার উৎখাত বিরোধী আন্দোলনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যোগ দেয় এই আন্দোলনে। এরপর সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্র জনতা একত্রিত হয় ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে। আগস্ট ৩, ২০২৪ এ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরাও এই আন্দোলন সমর্থন করে হাসিনার আদেশ অমান্য করে। এর পরপরই হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়ে বিজয় অর্জন হয় ৫-ই আগষ্ট ২০২৪ তারিখে।

এই নয়া স্বাধীনতা অর্জনে বলি দিতে হয় শহীদ আসাদ (রংপুর), মুগ্ধসহ প্রায় ২ হাজারের অধিক ছাত্র জনতাকে। বহু সাধারণ জনগণ আহত-নিহতের তালিকায় উপস্থিতি প্রমাণ করে- এই আন্দোলন জনসমর্থন পেয়েছিল, যা কোনো রাজনৈতিক দল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল ফ্যাসিস্ট রেজিমে।

বাংলাদেশের বর্তমানে সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় দল বিএনপি এই আন্দোলনে ছিল না। দল হিসাবে কিন্তু বিএনপির বহু নেতাকর্মী সরাসরি বা নীরবে এই আন্দোলন সফলে সম্পৃক্ত ছিল। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অবদান উল্লেখযোগ্য এই আন্দোলনে।

৫-৮ আগষ্ট ২০২৪ দেশের বিশৃঙ্খল অবস্থা সামাল দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। অতঃপর ৮-ই আগস্টে সকলের পছন্দের ও গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূস স্যারের ওপর সরকারের দায়িত্ব অর্পন করে বাংলাদেশের জনগণ।

দেশের সকল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়া অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্থ একটি দেশের দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখতে হয়। দেশের ৮০-৯০% পুলিশ পলায়ন করে জনগণের ভয়ে। স্বৈরাচার সরকারের সময় ফ্র্যাংকেস্টাইন হয়ে ওঠা এই পুলিশকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনাটা ছিল সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেসময় এগিয়ে আসে রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা রক্ষার্থে সেনাবাহিনীর সহায়তায়। 

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

এরপর কি হয়েছে তা আপনারা সবাই অবগত। দেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার বিরতিহীন প্রোপাগান্ডা, আওয়ামী অবৈধ অর্থের জোর, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে লুকানো ফ্যাসিস্ট সমর্থিত গোষ্ঠী ক্রমাগত ষড়যন্ত্র চালায়। দূর্বল ড. ইউনূস সরকারের পক্ষে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় আজ তার ব্যর্থতা/সফলতা নিয়ে হিসাব নিকাশ করতে বসেছি।

দেশের এই নাজুক অবস্থায় যেখানে জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভাজন সত্যিই দুঃখজনক। সবাই চায় ক্ষমতা। জনগণ নিয়ে কারোই মাথাব্যথা দৃশ্যমান নয়। দেশটার মালিক জনগণ হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর কলোনিয়াল আচরণ ও ক্ষমতার লিপ্সা জনমনে হতাশার জন্ম দেয়। এর মাঝে ড. ইউনূস সরকার বেশ কিছু মারাত্মক ভূল করেছে বুঝে অথবা না বুঝে। আমরা তাদের এ বিষয়ে কি ‘বেনেফিট অফ ডাউট’ দিতে পারি?

আমরা আজ ড. ইউনূস সরকারের ৫টি সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে সীমিত রাখবো এই আলোচনায়।

পাঁচটি সফলতা:

১। ব্যাংকিং সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরত

বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থায় সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় আজ এই সেক্টরে কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এক্ষেত্রে অবদান অনস্বীকার্য। এ সরকার নিয়মিত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করার পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর যা আওয়ামী সরকারের আমলে ধ্বংসের দোরগোড়ায় এসে ঠেকে, তা থেকে উত্তরণ একটা দুরূহ কাজ ছিল।

২। জন মনে স্বস্তি

(ক) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ: জনগণ এই জায়গায় সরকারের উপর বেশ সন্তুষ্ট বলে পত্র পত্রিকা ও সোশাল মিডিয়ার রিপোর্ট সমূহ পর্যালোচনা করলে একটা ধারণা পাওয়া যায়। গত রমজান মাসটা উল্লেখ করতে হবেই। সাধারণ জনগণ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, ঈদযাত্রা ও বিদ্যুৎ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

(খ) নিরাপদ ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা: ঈদ বলতেই আমরা সাধারণ জনগণ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম সিন্ডিকেটের মাফিয়াদের নির্যাতন। রমজান এলেই জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন বাড়বে, আর অসহায় জনগণ তা মেনে নীরবে শোষিত হবে। ঈদ যাত্রায় টিকেট কালোবাজারি, পথে পথে চাঁদাবাজি ছিল ওপেন সিক্রেট।

(৩) ভারতের সঙ্গে নতজানু নীতি হতে বেড়িয়ে আসা এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে ফ্যাসিজমের বিচার শুরু করা

এই জায়গায় ড. ইউনূস সরকারের সফলতায় সমগ্র বাংলাদেশ জাতি হিসেবে আবার মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়েছে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বজ্র কন্ঠে প্রতিবাদ ও সীমান্তে তাদের বিএসএফ জওয়ানদের পা ধরে বিজিবির কাছে মাফ চাওয়ার দৃশ্যটা কিন্তু সিম্বলিক।

আওয়ামী আমলে ভারত আমাদের যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো, তা এখন করতে দশবার চিন্তা করছে। আর তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় মিডিয়া ড. ইউনূস সরকারের প্রথম দিন হতেই মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

ড. ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজমের বিচার শুরু করে জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। আশা রাখছি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

৪। উপদেষ্টারা ব্যাক্তিগতভাবে দূর্নীতিমুক্ত ইমেজ

দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এই সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির তেমন কোন গুরুতর অভিযোগ নেই বলেই জনগণ বিশ্বাস করে। এই দৃশ্য বাংলাদেশ শেষ কবে দেখেছে, তা মনে করতে পারছে না।

৫। ফ্যাসিজম পরবর্তী ক্লিন ইমেজ সম্বলিত সরকার ও ড. ইউনূসের ব্যাক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি

ড. ইউনূস তার মেধা, সততা, পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এক ক্যারিসমেটিক নেতা হয়ে উঠছে বলেই জনগণের একটা অংশ তার সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক সে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরবর্তী এত বড়ো মাপের নেতা আমরা পাইনি। আগামী পঞ্চাশ বছরেও পাবো কি না, সন্দেহ আছে। 

ড. ইউনূস সরকারের পাঁচটি ব্যর্থতা:

১। মৌলিক সংস্কারে দৃশ্যমান পরিবর্তনে ব্যর্থতা

(ক) পুলিশ সংস্কারে ব্যর্থতা: পুলিশ বাহিনীতে আজো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী ঘরানার সেসব পুলিশ আজো বিদ্যমান। পুলিশের ওসি ও এসি লেভেলের ৯০% জনবল এখনো ফ্যাসিস্ট সমর্থিত বলে মনে করা হয়। সামান্য কিছু বঞ্চিত ও বিএনপি ঘরানার পুলিশকে চাকুরীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুলিশের ব্যর্থতায় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ আছে।

পুলিশের কার্যকরী ভূমিকার অভাবে সেনাবাহিনীকে সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ বানানোর অভিযোগটি আমলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নাগরিক হিসাবে এটা আমরা একদম মেনে নিতে পারছি না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার পক্ষপাতি।

(খ) জনপ্রশাসন সংস্কারে চরম ব্যর্থতা : ড. ইউনূস সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো আমলাদের সংস্কার করতে না পারা। আমলারা এখনো ফ্যাসিস্টদের পক্ষ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জনগণের যে সন্দেহ বিদ্যমান, তা দূর হয়নি। আমলারা যে কতটা সরকারকে চিপায় রেখেছে তা বুঝতে সচিবালয়ের ভেতর সাম্প্রতিক আন্দোলন ও এনবিআর বিলুপ্তির পরের ঘটনাগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলেই উত্তর পাওয়া যাবো। 

(গ) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অপরিক্কতা: বন্দর ও মানবিক করিডোর ইস্যুতে ড. ইউনূস সরকার কিছুটা একক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে সংকট তৈরী হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। জনাব খলিল সাহেবের নিয়োগ নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।  

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, বন্দর ও করিডোর নিয়ে সেনাপ্রধান তার দরবারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিয়ে অবস্থা জটিলতর হয়। ফলস্বরুপ ড. ইউনূস ও জেনারেল ওয়াকারের মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ তৈরী হয়। আমাদের রাষ্ট্রীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবার ম্যান্ডেট কি আমরা ড. ইউনূস সরকারকে দিয়েছি?

জাতির অভিভাবক হিসাবে ড. ইউনূস ও জেনারেল ওয়াকার এর মাঝে যদি কোনো মনস্তাত্ত্বিক দন্দ হয়ে থাকে, তবে ড. ইউনূসকেই তা জাতীয় স্বার্থে নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে। 

(ঘ) নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা: ঈদুল আজহা পূর্ববর্তী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, ২০২৬ এর এপ্রিলের যে কোনো সময় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার এই ভাষণের মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরী হয়েছিল, তা হয়তো কেটে যাবে। তবে জনগণের কাছে একটা সন্দেহ থেকে যাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না?

যদিও নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মাঠ হতে ফেরত আনা হবে না, তথাপিও শুধু সেনাবাহিনী দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি? 

পুলিশ, আনসার ও বিজিবিসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যদি নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনীকে সহায়তা না দিতে পারে, তবে এই আশংকা থেকেই যাবে। এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত পুলিশ সংস্কার। 

(২) ইউনুস সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে দেয়নি

আজ-অব্দি জুলাই ঘোষণা পত্র না হওয়ায় ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থতার দায়ভার নিতেই হবে। ২০২৪ এর ৩১-শে ডিসেম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা যখন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান করতে যায়, তখন কোন এক অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্রে এটি হয়নি। এই ব্যর্থতা গনঅভ্যুত্থানে আহত নিহত সকল শহীদদের আত্মার প্রতি বেঈমানি ও বে-ইনসাফ করার সামিল।  

এই অপরাধের বোঝা ড. ইউনূস সরকারের সকল উপদেষ্টাদের বিবেককে বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আমরা আশাবাদী তিনি জনগণের এই অভিপ্রায়ের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান জানাতে কার্পণ্য করবেন না।

(৩) রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রতিনিধি গণ্য করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে

ড. ইউনূস সরকারের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা তাদের পলিটিকাল দৈন্যতা। জনগণের সঙ্গে তারা সম্পর্ক তৈরী করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই জনগণই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এর ফলে জনগণের সঙ্গে সরকারের বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে। 

(৪) একজন উপদেষ্টা নিয়োগে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের এবং জনমত পরোয়া না করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় রাষ্ট্রে সরকার বনাম সেনাবাহিনীর মাঝে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত। 

(৫) রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের আস্হা অর্জনে সমস্যা।

(ক) তৃণমূল পর্যায়ে সেবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধন ও সংযোজনে ফোকাসে ব্যর্থতা দৃশ্যমান।  

(খ) কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত বিষয়ে অপ্রয়োজনে জড়িয়ে পরেছে সরকার। 

(গ) ইউটিউবিয়ানের পীর সাহেবদের একমুখী মুল্যায়নকে অতি গুরুত্ব প্রদান করায় রাষ্টের অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক মুল্যায়নকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে সরকারকে দূর্বল করা হয়েছে বলে বিদগ্ধ মহল মনে করেন।  

৫। তোষামোদি কালচারের ভিন্ন সুজনীয় রুপে আবির্ভূত হয়ে Truth to Power নীতির চর্চার অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। 

উপসংহার

সকল সফলতা ও ব্যর্থতাকে নিয়েই আমাদেরকে এই রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ইতিহাস হতে দেখা যায়, প্রতিটি জাতি স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পার হলে রাষ্ট্র মেরামতের সূযোগ পেয়ে উন্নতির হাইওয়েতে সুপারসনিক গতিতে এগিয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পর আমরা যে সূযোগ পেয়েছি, তা আমরা অবশ্যই কাজে লাগাবো। এই বিশ্বাস নিয়ে জাতিকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে আমরা সম্মিলিতভাবে অবদান রাখবো। সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের এই দোয়া কবুল করুন। 

ঈদ মোবারক।

লেখক:

মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অবঃ)

কলামিস্ট, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।