ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ক্ষেত
রাজারহাটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বেশ কয়েক দিন ধরে ভারী বর্ষণে মাঠ-ঘাট, খাল বিল পানিতে থৈ থৈ করছে। ডুবে গেছে উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেতসহ চরাঞ্চলের বাদাম, পাট ও রবিশস্য। নিম্নাঞ্চলে উঠতি ইরি-বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েক দিন ধরে ধানক্ষেত পানির নিচে থাকায় পচন ধরেছে ধান গাছগুলোয়। তার পরও ধানের আশায় কৃষকরা কোমরপানিতে নেমে ধান কাটছে শ্রমিকদের দিয়ে। এবার ধান-চালের পাশাপাশি ধানের খড়ে পচন ধরায় গো-খাদ্যের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
অন্যদিকে তিস্তার চরাঞ্চলে পানি জমে যাওয়ায় ডুবে যাওয়া ক্ষেতের অপ?রিপক্ব বাদামও রবিশস্য তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। আলুর পর বাদামেও ভয়াবহ ক্ষতিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপ?জেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের চাকিরপশার পাঠক গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে। ডুবে গেছে উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেত। এসব এলাকা দেখে মানুষ হাই নিঃশ্বাস ফেলছেন। প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ায় এবার কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেন। কৃষক মানিক মিয়া বলেন, পাঁচ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগিয়েছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে সব ধানক্ষেত পানির নিচে রয়েছে। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
একই এলাকার কৃষক হান্নান জানান, দুই একর জমির ধান পানির নিচে রয়েছে। কামলা পাওয়া না যাওয়ায় নিজেই কোমরপানিতে নেমে ধান কাটছি।
কৃষক আ. আউয়াল বলেন, বেশি দামে মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিয়ে পানির নিচের ধান কেটে নিচ্ছি। কয়েক দিন পানির নিচে থাকায় প্রায় সব ধান পড়ে গেছে।
বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে চরাঞ্চল ডুবে গেছে। কৃষকরা তাদের অপরিপক্ব বাদাম মরিচসহ বেশ কয়েকটি ফসল পানি থেকে টেনে তুলছেন।
উপজেলা কৃষি অ?ফিস সূত্র জানায়, চলতি ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ২৪৫ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর, পাট ৩৯২, তিস্তা নদীর চরে চিনাবাদাম ১৭৫, পাট ২০, মরিচ ৩ এবং শাকসবজি ৫ হেক্টরসহ চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু ক?য়েক ?দি?নের মাঝারি ও ভারী বৃ?ষ্টি হওয়ায় নিম্নাঞ্চল, খাল-বিলের উঠতি ইরি-বোরো ধান ও র?বিশস?্য পা?নিতে ত?লি?য়ে যায়।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চরবিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষকরা বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়া চিনাবাদাম ও কাউন উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক কৃষক অভিযোগ করেন, চরের অনেকই ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা কি দিয়ে দেনা পরিশোধ করবেন সেই আশঙ্কায় রয়েছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন, বেশ কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে গেছে। বদ্ধ পানির কারণে সাময়িক উঠতি ফসল ধান-বাদামের অল্প কিছু ক্ষতি হলেও বড় ধরনের তেমন ক্ষতি হবে না।