হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি

ডা. আয়শা আক্তার
২৩ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি

তীব্র গরমের ফলে শরীরে ঘাম হয় প্রচুর এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ঘামের ফলে শরীর থেকে লবণ বা সোডিয়াম কমে যায়, দেখা দেয় পানিশূন্যতা। এ ছাড়াও গরমের কারণে ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, বদহজম, পেটে সমস্যা, ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। ফলে রক্তনালিগুলো খুলে যায়। এর ফলে রক্তচাপ কমে যায়, যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃৎপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে তরল পদার্থ ও লবণের পরিমাণ কমে যায়, তার জন্য এই গরমের মধ্যে ওরাল স্যালাইন খেতে হবে, সঙ্গে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি।

তীব্র মাত্রার হিট ইনজুরি হলে ত্বকের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন বেশির ভাগ সময় ঘাম হয় না। শরীর খুব গরম হয়ে যায় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে উঠে গেলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, খিঁচুনি ভাব হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না নিলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গেলে ধরা হয় মাঝারি দাবদাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে ধরা হয় তীব্র দাবদাহ চলছে।

হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করতে হবে। অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করতে হবে। ভাতের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ঢিলেঢালা, হালকা, হালকা রঙের সুতির কাপড় পতে হবে। ২৪ ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৪ গ্লাস পানি পান করতে হবে এবং সহজে হজম হয় এ রকম খাবার খেলে শরীরে পানির অভাব দূর হয় অর্থাৎ ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

অ্যালকোহল দ্রুত ডিহাইড্রেট করতে পারে, তাই অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন। শসা, তরমুজ, ডালিম এবং মৌসুমি ফল পরিমাণে বেশি খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেউ যদি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তার শরীরে ঘাম না-ও হতে পারে। হিটস্ট্রোক হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে হলে প্রচুর পানি খেতে হবে, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, ছায়ায় অবস্থান করতে হবে, একনাগাড়ে বেশিক্ষণ রোদের মধ্যে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা।

এর জন্য দরকার ছায়ার মধ্যে অবস্থান নেওয়া। সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। মাথায় টুপি পরা অথবা মাথা ঢেকে রাখা। দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা পরিহার পরিহার করে সন্ধ্যায় অথবা খুব ভোরে করা যেতে পারে। আসুন এই গরমের সময় আমরা ঘরকে ঠাণ্ডা রাখি।

বেশি পরিমাণে গাছ লাগাই। সুস্থ পরিবেশ, সুস্থ মন আমাদের ভালো রাখতে সহায়তা করবে।

সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, তবে ৬০-এর ওপরে বয়স্কদের সঙ্গে অনান্য জটিল রোগে আক্রান্ত যারা আছে তাদের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কারণ তারা সহজে গরম আবহাওয়ার সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। তাই যতটা সম্ভব গরম থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে বাইরে বের না হওয়া ভালো। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারা ঘরেই থাকুন।

শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী, শ্রমজীবী ব্যক্তি যেমনÑ রিকশাচালক, কৃষক, দিনমজুর, শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকে তারা বেশি ঝুঁঁকিতে থাকে।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথমেই ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে, সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে, ফ্যান থাকলে ছেড়ে দিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। ঘাড়, বগলে বরফের টুকরা বা ঠাণ্ডা, ভেজা তোয়ালে রাখতে হবে। তবে সব কথার শেষ কথা হলো আমাদের নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং অন্যকেও সচেতন করা জরুরি।


ডা. আয়শা আক্তার : উপপরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল,

শ্যামলী, ঢাকা