সাম্যর খুনিকে গ্রেপ্তারে শাহবাগ অবরোধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল রবিবার বিকাল পৌনে ৪টা থেকে প্রায় সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি হচ্ছে এবং মূল হত্যাকারীকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাম্যর সহপাঠী ও শিক্ষকরা। ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম পার হলেও প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা।
শিক্ষার্থীদের সংহতি জানাতে উপস্থিত হন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। ন্যায়বিচারের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এরপর ‘প্রকৃত’ আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’। এর মধ্যে প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মানববন্ধনে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, সাম্য হত্যার আজ পাঁচ দিন হলো। এ সময়ে আমরা একটি আইওয়াশ গ্রেপ্তার দেখেছি, এটা মানতে পারছি না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত খুনিকে গ্রেপ্তার না করলে, আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
এ ছাড়াও বেলা ২টার দিকে সাম্য হত্যার বিচার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাবি ছাত্রদল। মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়। সেখানে তারা সমাবেশ করে। এ সময় তারা ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘দফা এক, দাবি একÑ প্রক্টর-ভিসির পদত্যাগ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আমাদের জুলাই বিপ্লবের সম্মুখ সারির যোদ্ধা সাম্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার চায়। এখন ‘শিক্ষার্থী’ নামে একটি গোষ্ঠী সাম্য হত্যাকা-কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে। এখনও রেজিস্ট্রার ভবনে আওয়ামী লীগের দালালরা বসে আছে। ভিসি ও প্রক্টরকে সতর্ক করে শিপন বলেন, আপনারা যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, তাহলে ছাত্রদল আপনাদের চেয়ার থেকে টেনে নামাতে বাধ্য হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, রাতের আঁধারে গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতীক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এসব দেখেও প্রশাসনের কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। টিএসসিতে ‘মোটিভ’ পাহারা দিতে যেখানে ১০ জন প্রক্টোরিয়াল টিম মোতায়েন থাকে, সেখানে প্রক্টর সাম্যর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপরও কীভাবে এই প্রক্টর তার পদে বহাল থাকেন? এ সময় তিনি সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচারসহ উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে ‘মবক্রেসির প্রতিনিধি’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
এদিকে সাম্য হত্যার তদন্ত গোয়েন্দা সংস্থা ডিবিতে হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগমসহ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, আমরা সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এসেছি। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন বিচার হয়। উপদেষ্টা বলেছেন, চেষ্টা করছেন, এটা এগিয়ে নেবেন।
এ সময় সাম্যের বন্ধু এসএস নাহিন ইসলাম বলেন, আমরা শাহবাগ থানাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু আশানুরূপ অগ্রগতি দেখিনি। আজ পাঁচ দিনেও সাম্য হত্যার মূলহোতা যে গ্রুপটা ছিল, তাদের ধরা হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ডিবির কাছে তদন্ত হস্তান্তর করা হবে। একই সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিশেষ ট্রাইবুন্যালে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম ক্যাম্পাস থেকে জানাব।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই শরীফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।