বৃদ্ধাশ্রম মর্মস্পর্শী বেদনার্ত বাস্তবতা
প্রতিটি শিশুর জীবন সূচিত হয় পিতা-মাতার আদর-মমতা, ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থ ত্যাগের মধ্য দিয়ে। তাদের হাত ধরে সে হাঁটতে শেখে, জীবনকে বুঝতে শেখে এবং বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য পিতা-মাতা তাদের ভালোবাসা, সময় ও সম্পদ ব্যয় করে এক গভীর স্বপ্নের জাল বোনেন। তাদের স্বপ্ন ও সন্তানের স্বপ্ন একই সঙ্গে প্রস্ফুটিত হয়ে অনাবিল আনন্দে ভবিষ্যৎ আলোড়িত হবে- এটাই তাদের কাম্য। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় পশ্চিমা বিশ্বের ছোঁয়া ও আধুনিক সামাজিকতার অজুহাতে পিতা-মাতা পরিণত বয়সে ঠাঁই পাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, যা শুধু হৃদয়বিদারকই নয় বরং মানবিকতার চরম বিপর্যয়ে পতিত এক নির্মম বাস্তবতা। সেখানে তাদের জীবনের সঙ্গী হয় নিঃসঙ্গতা, অবহেলা আর এক গভীর মানসিক হাহাকার। বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিটি দরজা যেন অপেক্ষার প্রতীকÑ প্রিয়জনদের কাছে পাওয়ার অপেক্ষা। পরিবারের প্রিয়জনদের ভালোবাসা পাওয়ার আকাক্সক্ষায় কাটে তাদের দিনগুলো, প্রিয়জনের সান্নিধ্য যেন সেখানে আজ শুধুই স্মৃতি।
পশ্চিমা বিশ্বে বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা দীর্ঘদিনের হলেও বাংলাদেশে এখন সে দৃশ্য ক্রমাগত প্রকট হয়ে উঠছে। আদ্যোপান্ত বিচার-বিশ্লেষণ না করে কোনো নেতিবাচক মানবতাবিরোধী সং¯ৃ‹তি আমাদের সমাজে প্রয়োগের চেষ্টা চলছে কিনাÑ তা ভেবে দেখতে হবে। যখন কোনো পিতা-মাতা শারীরিকভাবে দুর্বল ও চিকিৎসানির্ভর হয়ে পড়েন, প্রয়োজন হয় অধিক পরিচর্যা, ভালোবাসার ছোঁয়া এবং আপনজনের সান্নিধ্যÑ তখনই তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং রেখে আসা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানে বসবাসের আধুনিক ব্যবস্থা, উন্নত চিকিৎসাসেবাসহ যত সেবাই দেওয়া হোক না কেন, মায়ার বন্ধনে সযত্নে লালনপালন করা সন্তানের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। সন্তান, নাতি-নাতনি, আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্যও বেঁচে থাকার জন্য এক মহৌষধ। সন্তান চক্ষু শীতলকারী, তাদের দৃষ্টির বাইরে রেখে কোনো পিতা-মাতাই ভালো থাকতে পারেন না। যদিও অনেক সময় মানিয়ে নেন, অনেক সময় ভালো থাকার অভিনয় করেন, সেটাও সন্তানেরই সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধির জন্য। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত অবস্থায় পিতা-মাতা সন্তানের জন্য দোয়া করেন যেন তাদের মতো বার্ধক্যের করুণ পরিণতি তাদের সন্তানদের না হয়। বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা করা মানে শুধু দায়িত্ব পালন নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে এক অন্তর্নিহিত আনন্দ এবং আত্মতৃপ্তি। সেই শান্তির অনুভবটুকু হারিয়ে সুখের অন্বেষণ করতে গিয়ে কিছু মানুষ মরীচিকার পেছনে দৌড়াচ্ছে।
‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়-
এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম,/প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়/এমনি মায়ার ছলনা.../এরা ভুলে যায়/কারে ছেড়ে কারে চায়...’
আসলে সুখের জন্য প্রেম বা অন্য কিছু খোঁজার প্রয়োজন নেই, সুখের জন্য সুখই খুঁজতে হবে। পার্থিব সুখের জন্য কোনটা ছাড়তে হবে, কোনটা আঁকড়ে ধরতে হবে তা পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নীতি-নৈতিকতা শিক্ষার মাধ্যমে জানা ও বোঝার সুযোগ করে দিতে হবে। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে তাদের জীবনের অসহায় ও কঠিন সময়ে পাশে থেকে সেবা করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই দৃষ্টান্তই হবে বড় শিক্ষা। জীবনের সব পর্যায়ে পিতা-মাতাই পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকা উচিত। পরিবারের সুখের জন্য পিতা-মাতাকে দূরে রেখে, পরিবার থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এক নির্মম ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যে সন্তান আজ পিতা-মাতাকে দূরে রাখছে, একদিন সে-ও বৃদ্ধ হবে। হয়তো সে কখনোই প্রত্যাশা করবে না যে তার পরিণতিও তার পিতা-মাতার মতো হোক। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক ও বিবেকবান মানুষ কখনোই পিতা-মাতাকে দূরে রেখে সুখী হওয়ার চিন্তা করতে পারে না।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
পরিবারে বৃদ্ধ পিতা-মাতার উপস্থিতিই পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলে। তাদের সঙ্গে থাকা, তাদের প্রয়োজন মেটানো, দুঃখ-সুখে অংশীদার হওয়াÑ এই সহজ মানবিক কাজগুলোর মধ্যেই যে প্রকৃত সুখ নিহিত তা অনেকেই বুঝতে পারে না। বৃদ্ধ পিতা-মাতা শেষ জীবনে যখন সন্তান, নাতি-নাতনি, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকেন তখনও তারা পরিবারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সফলতা অথবা ব্যর্থতা তাদের আন্দোলিত করে। পরিবারের সব সদস্যের সান্নিধ্যে তারা অধিককাল বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে থাকা নিঃসঙ্গ পিতা-মাতা দুঃখ-কষ্টে, কর্মহীন জীবনে ভালো থাকার কোনো প্রেরণা খুঁজে পান না। জীবনের এই চরম অবহেলিত মুহূর্তে ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া নিঃসঙ্গ পিতা-মাতার সম্বল আর কিছু থাকে না। সেখানে তারা বেঁচে থাকার জন্য কোনো কারণ খুঁজে পান না; এ যেন শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। খবড় ঞড়ষংঃড়ু-এর ‘ডযধঃ গবহ খরাব ইু’ গল্পে দেখা যায়, একজন দেবদূত মানুষের মাঝে বসবাস করে জানতে চায়Ñ ‘মানুষ কিসে বাঁচে?’ এ প্রশ্নের উত্তরে সে আবিষ্কার করলÑ মানুষ ভালোবাসার কারণেই বাঁচে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার শেষ জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পরিবারের সান্নিধ্য ও ভালোবাসা। পরিবারহীন, ভালোবাসাহীন নিঃসঙ্গ জীবনে মানুষ বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলে। ‘বৃদ্ধাশ্রম’ কি আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের বিপর্যয় নয়? ইসলাম ধর্মে পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাদের সেবা প্রদান করাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেÑ “তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া কারও ইবাদত কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদের ‘উহ্’ শব্দটিও বোলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বোলো।” (১৭:২৩)। কত বড় মর্যাদাপূর্ণ স্থানে মহান আল্লাহ পিতা-মাতার অবস্থান দিয়েছেন এ আয়াতে তা স্পষ্ট। এই শিক্ষা আমাদের সমাজ কতটুকু নিতে পারছে তা চিন্তনীয়। সন্তানকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে হবে, জীবনে যেন সফলতার শিখরে পৌঁছতে পারে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবেÑ এতে দোষের কিছু নেই। তবে ধর্মীয় শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার চর্চা হতে হবে সমস্ত শিক্ষার মূলভিত্তি। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনহীন, আত্মিক সম্পর্কবিহীন অবস্থান থেকে মানবতার বিকাশ হতে পারে না।
পারিবারিকভাবে নিজ জীবনে এই মৌলিক শিক্ষাগুলোর বাস্তবায়ন করে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সন্তানদের সামনে পিতা-মাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হবে। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং অবশ্যই তা নিজের স্বার্থেই। পিতা-মাতার সেবার মাধ্যমেই সার্থক হবে মহানবী (স.)-এর বাণী “...মায়ের খিদমতে লেগে থাকো। কেননা জান্নাত তার দু’পায়ের নিচে।” (সুনানে আন-নাসায়ি : ৩১০৪) এবং “...জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙে ফেলতে পারো অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারো।” (মিশকাত : ৯১০)
শুধু ইসলাম ধর্মেই নয় বরং অন্য ধর্মগ্রন্থগুলোতে পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে; যেমন বাইবেলে বলা হয়েছে : ‘ঐড়হড়ঁৎ ুড়ঁৎ ভধঃযবৎ ধহফ সড়ঃযবৎ, ংড় ঃযধঃ ুড়ঁ সধু ষরাব ষড়হম রহ ঃযব ষধহফ ঃযব খড়ৎফ ুড়ঁৎ এড়ফ রং মরারহম ুড়ঁ.’ (ঊীড়ফঁং ২০:১২)। হিন্দু ধর্মের উপনিষদ-এর একাদশ অনুবাকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘দেবকার্যে ও পিতৃকার্যে অমনোযোগী হইবে না; মাতা, পিতা, অতিথি এবং আচার্য যেন তোমার দেবতা হন অর্থাৎ দেবতাজ্ঞানে তাহাদের পূজা করিবে।’ তাহলে এই ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিতে পারছে না কেন সেটা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে এ বিষয়ে আলোকপাত করা আবশ্যক। অন্য কোনো সমাজের নৈতিকতা বিবর্জিত সংস্কৃতি যেন আমাদের সমাজকে কলুষিত না করে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। বৃদ্ধাশ্রমের মতো আবাসস্থল তৈরি করে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নির্বাসনে পাঠানোর সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটা যথাযথ কিনা তা-ও বিশেষভাবে বিবেচ্য। তবে সন্তানহীন বৃদ্ধ পিতা-মাতার বিষয়টি ভিন্ন, সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করবে; কোনোভাবে সেটা সর্বজনীন ব্যবস্থা হতে পারে না। মহান আল্লাহ পিতা-মাতার প্রতি যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার মাধ্যমে সমাজকে দীক্ষিত করতে হবে। যেমন, তিনি পবিত্র কোরআনে বলেনÑ ‘তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলোÑ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন।’ (১৭:২৪)
এখনও আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ‘পরিবার’ অর্থ হলো সব সদস্যের মায়ার বন্ধন; যেখানে পিতা-মাতা, সন্তান ও নাতি-নাতনি সবার হাসি-কান্না, ভালোবাসা আর মায়ায় জড়িয়ে থাকে সবাই। অমূল্য এই বন্ধন স্বর্গীয়, অপরূপ। পরিবার শুধু রক্তের বন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু নয়, এটি মূল্যবোধ, মানবতা ও নীতি-নৈতিকতা শেখার প্রাথমিক ভিত্তি। এই সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজেরই একটি ইতিবাচক ঘটনা বলিÑ এক মহিলার আটটি সন্তান। বাস্তবতা ও জীবন-জীবিকার তাগিদে সবারই আলাদা সংসার। তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর পর ৩২ বছর জীবিত ছিলেন। এ সময় তাকে কাছে পাওয়ার বা রাখার জন্য আট সন্তানদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি যত বার্ধক্যে উপনীত হন, সন্তানদের তার প্রতি তত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়তে থাকে, সবাই তাকে কাছে রাখতে চায়। বৃদ্ধ মা যে বাসায় বসবাস করতেন সেখানে প্রতিনিয়ত তার সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করে আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা লেগেই থাকত। তিনি তেমন কোনো কাজ করতে পারতেন না, সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন না, তবু তিনিই ছিলেন মধ্যমণি। খাবার টেবিলে বা অন্য কোনো আসরে অধিক মর্যাদাপূর্ণ আসনটি ছিল তার জন্য, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে তার সম্মতি গ্রহণও ছিল পারিবারিক ঐতিহ্য। শুধু ‘মা’ হিসেবে পরিবারে তার অবস্থানই ছিল শ্রদ্ধার মূল কারণ। এমনকি মৃত্যুর আগে তিনি যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেই হাসপাতালের সামনে প্রতিনিয়ত তার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়স্বজনে পরিপূর্ণ থাকত। সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই চিকিৎসা খরচ বহন করার জন্য স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এসেছিল। সমাজে এ ধরনের চিত্র অনেক রয়েছে; রয়েছে মূল্যবোধ ও প্রকৃত সুখের প্রত্যাশা। পরিবারটি এখনও তার স্মৃতির মধ্যে সুখ অনুভব করে, খুঁজে ফেরে প্রশান্তি। বিষয়টি তার নাতি-নাতনিদের ওপর অত্যন্ত গভীর প্রভাব ফেলে। তাদের এ আচরণকে পরবর্তী প্রজন্ম ও প্রতিবেশীরা একটি সুখকর, সুন্দর, সাবলীল চিত্র হিসেবে দেখতে পায়।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
প্রকৃত অর্থে পিতা-মাতা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন, তখন তারাও শিশুর মতো নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এই সময়টিতে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পরিবারের সান্নিধ্য, সন্তানের ভালোবাসা ও মমতা। পিতা-মাতার বড় প্রত্যাশা হলোÑ তাদের প্রিয় সন্তান যেন পাশে থাকে, একটু কথা বলে, হাত ধরে, হাসিমুখে কাছে বসে। এই চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়, এ তাদের প্রাপ্য ভালোবাসা। সন্তানের কর্তব্য হলো সেই ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে, তাদের সার্বিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। পিতা-মাতাকে পরিবারের মধ্যেই রেখে যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে দায়িত্ব পালন করা শুধু সামাজিক কর্তব্য নয়, এটি একটি আত্মিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। সে মাতৃদুগ্ধ পান করে বড় হয়েছে। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।’ (৩১:১৪)। অতএব ধর্মীয় শিক্ষাটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও পরিবারে সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হবে যারা পিতা-মাতার সেবাকে নিজেদের কর্তব্য এবং গর্বের অংশ হিসেবে মনে করবে। পিতা-মাতার শেষ সময়ে যদি আমরা তাদের পাশে না থাকি, তবে শুধু মানবতা হারাবে না, বরং আমরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ব। সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য হলোÑ জীবিত অবস্থায় পিতা-মাতার সেবা করার সুযোগ পাওয়া। আসুন, আমরা সেই সৌভাগ্যের অংশীদার হই এবং ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে পরিবারকে নীতি-নৈতিকতার আদর্শে গড়ে তুলি।
মেজর জেনারেল মো. মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উপাচার্য
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!