ডেঙ্গুজ্বরে শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন
ডেঙ্গুজ্বরের শিশুদের নিয়ে আজকে আলোচনা করব। ডেঙ্গুজ্বরে শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বেশি তৈরি হয় শিশুদের ক্ষেত্রে। জ্বরের সঙ্গে গায়ে ব্যথা, বমি, মাথা ব্যথা, খুব দুর্বল লাগা, ফুসকুড়ি হতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের অসুস্থতায় ঝুঁকির প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ সাধারণত মশার কামড়ের ৫ থেকে ৭ দিন পরে দেখা যায়। শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম অনুভব করতে পারে। কারণ শিশুরা প্রকাশ করতে পারে না, যার জন্য জ্বর হলো নাকি খাওয়ার রুচি নেই তা নিজেরা অনুভব করতে পারে না। হয়তো দেখা গেল তারা খেলাধুলা করছে বা তাদের যে জ্বর হয়েছে অথবা খেতে পারছে না এটা আসলে অভিভাবকরাই বুঝতে পারবেন। তাই শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। যেসব শিশুর আগে থেকেই নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার ইতিহাস থাকে, যেমন- কিডনির রোগ, রক্তজনিত বা লিভারসংক্রান্ত জটিলতা অথবা বিশেষায়িত ওষুধ সেবন, তাদের জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এর একমাত্র চিকিৎসা হলো শরীরের পানিশূন্যতা দূর করা। তীব্র হলে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় শিরায় স্যালাইন দেওয়ার মাধ্যমে রোগের মারাত্মক জটিলতা কমানো যায়।
শিশুদের জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করা, NS1 antigen, IgG, igM, প্রয়োজনে প্রতিদিন সিবিসি পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে চিকিৎসা নেওয়া। ডেঙ্গুর তীব্রতার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি এবং যারা ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে দেরি করে হাসপাতালে আসার কারণে মারা যাচ্ছে।
ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত তিনটি পর্যায়ে থাকে :
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
১. ফেব্রাইল ফেজ : প্রাথমিক পর্যায়ে তীব্র জ্বর (১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং ফ্লুর মতো উপসর্গ, যেমনÑ হাঁচি, কাশি বা নাক দিয়ে পানি পড়াÑ এগুলো দেখা যায়। শিশুদের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা বা বমি বমি অনুভব করতে পারে। জ্বর শুরু হওয়ার ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি হতে পারে।
২. ক্রিটিক্যাল ফেজ : সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমে যায়। এই সময়টা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত হ্রাস এবং হেমাটোক্রিটের মাত্রা বৃদ্ধির দিকে নজর রাখা উচিত। জ্বর কমে যাওয়ার পরেই দেখা যাচ্ছে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে থাকে।
এই সময়ে শরীরে পানিশূন্যতা দূর করার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার ও বিশেষ যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
৩. পুনরুদ্ধার : পর্যায়টি শুরু হয় যখন জ্বর কমে যায় এবং প্রায় ২-৩ দিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে বের হয়ে যাওয়া তরলগুলো ধীরে ধীরে পুনঃশোষণ হয় বা আগের পর্যায়ে ফিরে যায়। আস্তে আস্তে লক্ষণগুলো উন্নতির দিকে ধাবিত হয়। শিশুর যাতে জটিলতা তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন শুরু থেকেই করতে হবে।
ডেঙ্গুর চারটি ভিন্ন সেরোটাইপ রয়েছে, যার অর্থ একজন ব্যক্তি জীবনে চারবার সংক্রমিত হতে পারে। একবার যে সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয় সেই টাইপের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেকেন্ড টাইম আক্রান্ত হলে তখন অন্য আরেকটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়।
প্রায়ই প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টি বেশি গুরুতর হয়ে ওঠে যা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের মতো জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!
ডা. আয়শা আক্তার : উপপরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা