নীল হেলমেটে বিশ্বশান্তির রক্ষক : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যে শুধু সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা মোতায়েনই করেছে তাই নয়, এর সঙ্গে অর্জন করেছে ব্যাপক সুনাম এবং উজ্জ্বল করেছে দেশ ও বাঙালির পরিচয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার মাত্র ২ বছর ৯ মাস পরেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এরপর ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম একদল তরুণ ও সাহসী অফিসারকে জাতিসংঘের ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজার্ভ গ্রুপে (ইউএনআইএমওজি) প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী শুভ যাত্রা আরম্ভ করে। ৩৭ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে (ইউএনপিকেও) অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে শান্তি স্থাপনে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাতিসংঘ সারাবিশে^ ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৯টি শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিচক্ষণতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ১,৬৭,২৭৪ জন শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায়, বর্তমানে ১২টি দেশ বা স্থানে ৬,৯২৪ জন শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে সমুন্নত রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে ও মূলধারার অপরিসীম অংশ হিসেবে শান্তিরক্ষা মিশনে পুরুষ সেনা সদস্যের পাশাপাশি নারী সেনা সদস্যের অবদান ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার। ১৯৮৮ সালে সেনা কর্মকর্তাদের শান্তিরক্ষী প্রেরণের যাত্রা শুরুর পর ১৯৯৩ সালে নৌ ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষী হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়া মিশনে যোগদানের মাধ্যমে নিজেদের যাত্রা শুরু করে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা মোতায়েনকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান বেশ কয়েকবার নিশ্চিত করেছিল। তবে বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা একদিকে যেমন পেশাদারত্বের পরিচয় দেয় তেমনি এর দ্বারা অর্জিত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। সর্বোপরি বিশ^পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তার আত্মত্যাগ ও কর্মস্পৃহা দ্বারা বিশ^শান্তির রক্ষক হিসেবে মাথা উঁচু করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
শান্তি মিশনে সেনা মোতায়েন : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী মূলত সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ মিশনে সহায়তা প্রদান করে আসছে। সেনা মোতায়েনে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনা করলে দেখা যায় ৪ বার প্রথম স্থান, ৪ বার দ্বিতীয় স্থান এবং ২ বার তৃতীয় স্থান অর্জন করে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সেনা মোতায়েনের দিক থেকে বৃহৎসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (গঙঘটঝঈঙ), যেখানে তারা বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন ও এর সঙ্গে বিদ্রোহী দলগুলোকে নিরস্ত্রীকরণ এবং যুদ্ধপ্রবণ স্থানগুলোতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অন্য দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ সুদান (টঘগওঝঝ), আবেয়ি (টঘওঝঋঅ), মালি (গওঘটঝগঅ) এবং লেবানন (টঘওঋওখ) মিশনে সংঘাত প্রতিরোধে স্থানীয় জনগণকে মানবিক সাহায্য প্রদান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত স্থানে রাস্তা ও যোগাযোগব্যবস্থা পুনর্গঠনেও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশিদের নিরপেক্ষ মনোভাব ও দুস্থদের প্রতি সেবামূলক আচরণ বিশ^দরবারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের অবদান : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরাও নীল হেলমেটে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। বিশেষ করে, হাইতিতে জাতিসংঘ স্ট্যাবিলাইজেশন মিশনে (এমআইএনইউএস-টিএএইচ) বাংলাদেশ ফর্মড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সাধারণ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষা প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করে থাকেন। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিজ পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠা এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে সম্মান অর্জন করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ^শান্তিতে বাংলাদেশের অবদানসমূহ : মিশন শুরুর পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যেসব স্থান ও দেশে নিয়োজিত ছিলেন, সব স্থান ও দেশের শান্তিতে বাংলাদেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেটা হতে পারে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠন ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় পর্যায়ে যুদ্ধ যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে কঠোর পদক্ষেপ এবং একই সঙ্গে মানবতার পবিত্র হাত বাড়িয়ে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপন করতে সার্থকভাবে সফলতা অর্জন। এ ছাড়াও বাস্তুচ্যুত জনগণকে পুনর্বাসন, সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্রীকরণ ও নিষ্ক্রিয়করণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত নিয়ে সংঘাতপূর্ণ সমাজের মধ্যে পুনরায় প্রাণসঞ্চার করেছে।
বিশ^পরিসরে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী : মহিলা, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক ইউএন রেজুলেশন-১৩২৫ অনুযায়ী বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীরা বিশ^পরিমণ্ডলে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৯৬২ জন নারী শান্তিরক্ষী ইউএন শান্তি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৪১৫ জন নারী সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। সংঘর্ষ প্রভাবিত এলাকায় স্থানীয় মহিলাদের মানবিক সহায়তা প্রদান ও নারী-পুরুষ সমতা স্থাপনে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশের মহীয়সী নারী শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি সংশ্লিষ্ট দেশের স্থানীয় মহিলাদের মাঝে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সঞ্চার করে আসছে।
মানবতার উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকা : যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সংঘাতকবলিত গোষ্ঠীসমূহকে মানবিক সহায়তা (পানি, ওষুধ, ভ্যাকসিন ও পশু চিকিৎসা) প্রদানে সর্বদা নিয়োজিত থাকেন। এ ছাড়াও উদ্বাস্তু ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (ওহঃবৎহধষ ফরংঢ়ষধপবফ ঢ়বড়ঢ়ষব-ওউচ) প্রত্যাবাসনে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর, খাদ্য ও পানি সরবরাহ এবং থাকার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ঘর নির্মাণে শান্তিরক্ষীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। অধিকন্তু বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও সড়ক নির্মাণের মতো জটিল ও ব্যয়বহুল স্থাপনা নির্মাণেও বাংলাদেশের প্রকৌশলী ইউনিটসমূহ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যা সর্বজন সমাদৃত। কেননা মিশন এলাকার মতো বন্ধুর পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে ও অনিরাপদ পরিবেশে এরূপ কাজ পরিচালনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা দিবারাত্রি নির্ঘুম পরিশ্রম করে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই কঠোর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আর এভাবে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে পুনরায় স্বাভাবিক সমাজে পুনর্বাসন করানোর ফলে সেই এলাকায় মানবিক উন্নয়ন প্রসারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সহায়তা করে আসছেন।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগ : বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ‘বিদেশের মাটিতে অজানা শত্রুর’ মোকাবিলা করতে বিপদের মুখে কখনও পিছু হটেননি। জটিল এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করা শান্তিরক্ষীরা প্রায়ই তাদের জীবন বিপন্ন করে এসেছেন। শান্তিপ্রক্রিয়ার মহৎ উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত ১৪৪ জন শান্তিরক্ষী সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন এবং ২৪৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে
নিরাপত্তাহীনতা ও প্রতিকূল পরিবেশ : প্রতিটি মিশন এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা ও প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান। বিশেষ করে মালি ও চ্যাপ্টার-৭ অন্তর্ভুক্ত এলাকাসমূহে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও প্রচুর অ্যামবুশের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ ছাড়া মিশন এলাকায় সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের মোকাবিলা করা এবং০০ রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম করাও বেশ দুঃসাধ্য, যা বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও পালন করেছেন।
সরঞ্জাম ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা : মিশন এলাকায় সরঞ্জাম সাধারণত সমুদ্রপথে ও আকাশপথে পাঠানো হয়ে থাকে, যা একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ ছাড়াও এ কাজে অনেক কালক্ষেপণ হয়ে থাকে। ফলে এতে প্রচুর আর্থিক খরচের সম্মুখীন হতে হয়, যার ফলে সরঞ্জাম ঘাটতিসহ মিশন এলাকার কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক : আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে যে কোনো দেশের সেনা প্রেরণ সংশ্লিষ্ট দেশের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করে। নিজ নিজ ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সেনা প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রবল আকারে শীতল প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত চলমান। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ তার বর্তমান অবস্থান অটুট রেখে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে যথেষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছে। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সার্বিকভাবে সব স্তরের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টার দরকার। কেননা পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপট ও জাতিসংঘের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনে একটি দেশ কতসংখ্যক সেনা মোতায়েন করতে পারবে তার সংখ্যা নির্ধারণ করে থাকে।
আধুনিক উন্নত রণ-সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ : প্রযুক্তির দ্রুত ক্রমবিকাশ ও প্রসারের প্রভাব বিশে^র সব দেশে রণ-সরঞ্জামের ওপর পড়ে, যার ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম। এর কারণে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার করছে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক রণ-সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ। যে কারণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যেমনÑ ড্রোন, নাইট ভিশন, আইইডি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় করার প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যে কোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে এসব প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠাও অত্যাবশ্যকীয়। বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার যুদ্ধ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং বহির্বিশে^র কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণের বিষয়টিও (প্রযুক্তিগত সহায়তা) আমলে নেওয়া প্রয়োজন। এই ক্রমবর্ধমান শান্তিরক্ষা মিশনে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশকে উন্নত সরঞ্জামে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
নারী সদস্যের অপ্রতুলতা : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ১৮% স্টাফ অফিসার ও সামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে সীমিতসংখ্যক মহিলা সদস্য বর্তমান থাকায় এই লক্ষ্য পূরণ বেশ কষ্টসাধ্য। তবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ব্যাটালিয়নে ‘মহিলা সম্পৃক্ততা দল’ চালু করে এবং পরবর্তীতে সব প্রধান কন্টিনজেন্টে তাদের মোতায়েন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য করণীয়
নারী সদস্য মোতায়েনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা : জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ১৮% স্টাফ অফিসার ও সামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন বাহিনীতে নারী সদস্যের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করা যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে যেমন নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে, তেমনি নারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিকরণ : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এএফডি দিবারাত্রি পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি যুদ্ধ আক্রান্ত দেশের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করলে জাতিসংঘে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধিকরণ সম্ভব এবং এর পাশাপাশি ওই দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এর ফলে আসন্ন মিশনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভূমিকা সুরক্ষিত করা এবং জাতিসংঘের প্রধান শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘ ও স্থায়ী করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ মিশনে তাদের ব্যাপক অবদানের জন্য বিশ^শান্তি রক্ষায় একটি মূলস্তম্ভ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের উপস্থিতি যুদ্ধবিরোধ নিষ্পত্তিতে মানবিক সহায়তায় এবং নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরোধে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে মিশন বন্ধ হয়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত নিরাপত্তার হুমকির ফলে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতার এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতির কারণে সেনা হ্রাসের মতো চ্যালেঞ্জসমূহ দ্বিপক্ষীয় কৌশলের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। অধিকন্তু, মহিলা শান্তিরক্ষী সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, উন্নত সরঞ্জামের ওপর প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ এবং সার্বিকভাবে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি নেতৃস্থানীয় শান্তিরক্ষী দেশ হিসেবে তার অবস্থানকে আরও মজবুত করতে পারে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও বিশ^শান্তির প্রতি তাদের অটল অঙ্গীকার বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অটুট রাখবে বলে আশা করা যায়। সর্বোপরি, বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর এই মহান কার্যক্রম আমাদের সবার কাছে প্রশংসনীয়।
মেজর শামীম সাখাওয়াত : পিএসসি, এয়ার ডিফেন্স
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!
কর্ড টু প্রোভিসি, বিইউপি