গজনী অবকাশে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) প্রতিনিধি
০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গজনী অবকাশে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক

এবারের ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট ভারতের সীমান্তঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র ‘গজনী অবকাশ’। কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা ও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে এ পর্যটনকেন্দ্রের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার পর্যটক। ঈদের দিন থেকেই পর্যটনকেন্দ্রটি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ভ্রমণ করছেন বিনোদনের জনপ্রিয় এই স্থানে। কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে; আসছেন দম্পতি। পাশাপাশি অনেকে আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। গত মঙ্গলবার দিনব্যাপী এমনই চিত্র দেখা গেছে সেখানে।

এই পর্যটনকেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি এখানে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড়, টিলা আর সমতল ভূমিতে সবুজের সমারোহ। শাল, গজারী, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড়, আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।

এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকালে ছোট ছোট নৌকায় করে ঘোরার জন্য রয়েছে লেক। লেকের বুকে নৌকায় চড়ে পাহাড়ের পাদদেশে কফি আড্ডা আর গান এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা তৈরি করবে। গারো মা ভিলেজেও ছোঁয়া লেগেছে নতুনত্বের। মাশরুম ছাতার নিচে বসে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্ত জোড়া ধানক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যাবে খুব সহজেই। আগত শিশু দর্শনার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি এবার নতুন যুক্ত হচ্ছে শিশু কর্নার। সরেজমিন দেখা গেছে, গজনী অবকাশের বিভিন্ন জায়গায় কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজের মোবাইল ফোনে। চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক ছিল সকাল থেকেই মুখরিত। শিশুদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পার্কের ফটকে লম্বা লাইন দেখা যায়। বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। তাদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়। গজনী বোট ক্লাবের বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্যও পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন দেখা মিলে।

ময়মনসিংহ শহর থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, গারো পাহাড় ও কৃত্রিম তৈরি বিভিন্ন রাইড দেখে তারা বিমোহিত হয়েছেন। পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে তারা এসেছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে শিশুপার্কে এসেছেন মো. মেজবাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদ তো শিশুদের। অনেক ভিড়। একেকটা রাইডে উঠতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও মেয়েটা আনন্দ পাচ্ছে। তাতেই আমি খুশি।

বকশীগঞ্জ থেকে আগত দর্শনার্থী দম্পতি বিদ্যুৎ ও জেরিন জানান, তারা গাজীপুরে থাকেন। তাই ঈদের ছুটিতে শহরের কোলাহল ছেড়ে গজনী অবকাশে ঘুরতে এসেছেন। আগের চেয়ে পর্যটনকেন্দ্রে তৈরি কৃত্রিম দৃশ্যগুলো তাদের মনে অনেক আনন্দ দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার অন্যান্য ঈদের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ঈদের দিন থেকেই পর্যটকরা আসছেন। এতে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।