নতুন বিনিয়োগে সুখবর নেই

জিয়াদুল ইসলাম
৩০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নতুন বিনিয়োগে সুখবর নেই

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগের গতি আরও কমেছে। আস্থার সংকটে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন। এতে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ভাটা পড়েছে। বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিও তলানিতে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। একই সময়ে পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আড়াই শতাংশের কম। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি ঋণের উচ্চ সুদ ও ডলারের দাম বৃদ্ধির জন্যই এ পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি যদি ৩০ শতাংশ কমে যায়, এটা কোনোমতেই ভালো খবর না। অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ বার্তা নিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, সুদহার বেশি হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আছে। সুদহার কমানোর জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের পক্ষ থেকে দাবিও তোলা হয়েছে। কিন্তু সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল হিসেবে সুদ বাড়িয়েছে। ফলে সুদহার এখনই কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ বৃদ্ধি না হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ। তাই বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার জন্য যা যা করণীয় সেসব উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

নতুন বিনিয়োগ কমার পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে দায়ী করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে সবার আগে রাজনীতি ঠিক করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যদি থাকে তাহলে বিনিয়োগ হবে না। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয় তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো অসম্ভব। এমনিতেই নানা সংকটে বিদ্যমান কারখানাগুলোই যেখানে চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, সেখানে নতুন বিনিয়োগের সাহস কীভাবে দেখাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ১১৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০.১০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই পণ্যটির এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১৬৫ কোটি ডলার। অন্যদিকে এ সময়ে পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫.২২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ১৮৫ কোটি ডলার। একই সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিও কমেছে যথক্রমে ২.৫৪ শতাংশ ও ৮.৫০ শতাংশ। তবে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি। এই সময়ে পণ্যটির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৬.৮৬ শতাংশ ও ১০.৪১ শতাংশ। মূলত বিদ্যমান কারখানাগুলোকে চালু রাখতে কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে। রোজার কারণে একই সময়ে ভোগ্যপণ্যে এলসি খোলা বেড়েছে প্রায় ৬.৪৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রথম আট মাসে সার্বিকভাবে সব পণ্যের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৪.৬২ শতাংশ ও ৪.০৭ শতাংশ।

ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতি ও নতুন বিনিয়োগ থমকে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও তলানিতে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২.৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪.৯৩ শতাংশ।

সব মিলিয়ে গত জানুয়ারির শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮০ হাজার ১১০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের একই সময় যা ছিল ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭.১৫ শতাংশ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাদের সময়কে জানান, বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ এর আগে এতটা মন্থর দেখা যায়নি। এখন ঋণের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে এরও বড় অংশ এসেছে অনাদায়ী সুদ ও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে। তিনি আরও জানান, ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিচ্ছেন। বর্তমানে তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করছেন।