প্রসঙ্গ : তৌহিদি জনতা, তৌহিদি জঙ্গি!

মাহমুদ রেজা চৌধুরী
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রসঙ্গ : তৌহিদি জনতা, তৌহিদি জঙ্গি!

উৎসর্গ : লেখক ও গবেষক পাভেল আখতার। ভারতের পশ্চিমবাংলার অধিবাসী পাভেল। নিয়মিত লেখা পড়েন এবং তার অভিমত প্রকাশ করেন; আমার মতো একজন অতিসাধারণ মানুষের। প্রথমত, আমি তার কাছে এই কারণেও কৃতজ্ঞ। পাভেল একজন উঁচুমনের ব্যক্তি। কারণ তার বিনয় অনেককেই আকর্ষণ করে। এ ছাড়া পাভেল ভালো লেখক। গুণী। গুণী মেয়ের বাবাও। জানামতে, পাভেলের মেয়ে খুব সুন্দর ছবি আঁকেন। মাঝে মাঝে পাভেল তার লেখায় সেই ছবি সংযোজিত করেন। পাভেলের সাহিত্য প্রবন্ধ বা সাহিত্যবিষয়ক লেখা পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। তার লেখার বৈশিষ্ট্য, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে ‘ন্যায়পরায়ণবোধ’ তার সাহিত্যমানকে উঁচু স্থানে নিয়ে যায়। যে কোনো সাহিত্য ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এর রাজনৈতিক একটা স্বচ্ছতা এবং মানুষের জীবন পর্যবেক্ষণের নন্দিকতাকেও উজ্জ্বল করে। পাভেলের লেখায় সেটা বুঝতে পারি ও লক্ষ করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাই তার লেখা পড়ে সমৃদ্ধ হই। তিনি লিখেছেন উল্লেখিত বিষয়েও যেন কিছু লিখি। প্রধানত সেই কারণে লেখাটা তার নামেই উৎসর্গ করলাম।

এ ব্যাপারে জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। যে কোনো ব্যাপারেই আমার জ্ঞান অত্যন্ত সামান্য। এর মধ্যে কিছু কিছু ব্যাপারে খুবই সামান্য। অনেক বিষয়ে পড়াশোনার চেয়েও অন্তরবোধ ও বিশ্বাস; বেশি অনুপ্রাণিত করে, তাই কলম ধরি ও মাঝে মধ্যে কথা বলি। এটা ‘পরানুভূতি’। আলোচিত বিষয়েও যা লিখছি পরানুভূতি থেকে। ভুল হতেই পারে, ভুল হলে আপনারা শুধরে দিবেন। ক্ষমা করবেন।

‘তাওহিদ’, এর সঙ্গে ‘জঙ্গির’ কোনো সম্পর্ক নেই। চারিত্রিক মিল নেই। কারণ তাওহিদ বলতে বিশেষ করে মুসলমানরা বুঝি, এক আল্লাহর ‘একত্ববাদ’ ও তাঁর প্রশংসা এবং ‘উপাস্য’কে। যাকে আমরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানরা বলি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এটা তাওহিদের প্রথম শর্ত। আল্লাহ ছাড়া কোনো ‘ইলাহা’ নেই। আল্লাহর কোনো সঙ্গী, সাথী নেই। আমরা একমাত্র সেই আল্লাহর ইবাদত করি অর্থাৎ ‘উপাসনা’ করি। আল্লাহই আমাদের একমাত্র ‘উপাস্য’। এখানে উপাসনা ও উপাস্য কথার গভীরতাকে বোঝা দরকার। উপাস্য, উপাসনা আর শুধু ‘স্মরণ’ এক নয়। এক আল্লাহর উপাসনা অন্য কোনো কিছু স্মরণ করার চেয়ে অনেক ব্যাপক।

পৃথিবীর অনেক জাতি বিশ্বাস করেন এবং চর্চা করেন একটা প্রধান শক্তিকে যাকে তারা ‘রব’ বা গড বলেও সম্বোধন করেন। কিন্তু এঁরা রব বা সেই ‘গডের’ সঙ্গে সমতুল্য করে আরও অনেক কিছুতেও বিশ্বাস করেন। শরিক করেন বা সমান শক্তিশালী বলেও মনে করেন। মূর্তিপূজা থেকে শুরু করে অনেক কিছুকে অনেকেই তারা দেবতা বা সৃষ্টিকর্তার এক এক ধরনের রূপ, প্রতিরূপ বা সহযোগী শক্তি বলে মনে করেন। যেমন শিবপূজা, সরস্বতী পূজার সঙ্গে অনেক দেবদেবীর পূজা বা কোনো প্রতিবিম্বের পূজা। খ্রিস্টানদের ‘পোপের’ প্রতি অন্ধ আনুগত্য। এক সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়া করান। এটাকে ‘তৌহিদ’ বলে না।

তৌহিদ মানে আমাদের একজনই ‘উপাস্য’ যাকে উপাসনা করি সে এক আল্লাহ। এবং তাঁর কোনো শরিক নেই। পাশাপাশি বিশ্বাস করি যদি তৌহিদি হই সে এই পৃথিবীর সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শরিক নেই, তাই বলি ও মানি। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন না তারাও এই এক আল্লাহর সৃষ্টি। অতএব যদি তৌহিদি হই তাহলে পৃথিবীর সব প্রাণীকুল এবং মানুষকে এক দৃষ্টিতে দেখি এক আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে। আল্লাহ যেমন তাঁকে কেউ মানুক বা না মানুক, তার ওপর রাগ করে থাকেন না। আমাদেরও উচিত যারা নিজেদের তৌহিদি ব্যক্তি বা মানুষ বলে মনে করি, সে ক্ষেত্রে সেই এক সৃষ্টিকর্তার কোনো সৃষ্টির প্রতিই অবহেলা, অশ্রদ্ধা, ঘৃণা, অবজ্ঞা, হিংসা প্রতিহিংসা, জুলুম ও বৈষম্যমূলক আচরণ না করা। পবিত্র কোরআনের সুরা ইমরান, সুরা তওবা, সুরা আনাম। মনোযোগসহকারে পড়লে এবং তার মেসেজ বুঝতে পারলে বুঝব, তৌহিদি কথার অর্থ যে কতটা গভীর। উল্লেখিত সুরা না বুঝে বা তার কোনো একটা কথা ধরে আমাদের মধ্যে যদি কোনো বৈষম্যমূলক চিন্তা আসে বা অপরাধমূলক আচরণ করি কেউ। তখন তৌহিদি জনতা বা তৌহিদি ব্যক্তি থাকি না।

আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসের ব্যাপারটা কেবল মুখের কথা নয়। হৃদয়ে অনুধাবন করার কথা। এক আল্লাহর অনুসারী ও উপাস্য কেউ হলে তার মধ্যে কোনো ধরনের উগ্রতা বা জঙ্গি চিন্তা আসতেই পারে না। এই অর্থে ‘তৌহিদি জঙ্গি’, কথাটা ভ্রান্ত বা ভুল চিন্তা। এটা আমাদের দুর্বলতা, ভয় বা অন্য কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা থেকে বলা। পড়া থেকে না। কোনো কথা বলার আগে একটু পড়াশোনা দরকার অন্য কারও জন্য না হলেও নিজের জন্য। তাৎক্ষণিক না হলেও দেরিতে হলেও নিজের অনেক ভুল সংশোধন করে নেওয়া যায়। আলোচনা হতেই পারে, যারা না বুঝে বা ‘অতিরিক্ত’ আবেগে কোনো বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে অন্যের ওপর ‘জুলুম’ (অন্যায় আচরণ বা ব্যবহার) করি, করেন। তাদের কি বলা যাবে! দোষী, সে যে ধর্ম বিশ্বাসেরই হোক না কেন। তার বড় পরিচয় সে দোষী, তার ‘বিশ্বাস’ না, তার কাজ। অনেক সময় আমরা লক্ষ করি যে, কোনো রাজনৈতিক আদর্শ বা বিশ্বাস। এর একদল অনুসারী যা উল্লিখিত দর্শন বলে না, তাও করি। সেই কাজে মানুষকে বিভ্রান্ত করি, নিজেদের ভালো চিন্তাকেও কলুষিত করি। অন্ধকারে চলি।

এই ব্যাপারে বর্তমান বিশ্বে প্রধান দ্বন্দ্ব, ধর্ম বনাম ধর্মহীনতা বা এই বিষয়ে কুতর্ক বা সংশয়। এসব দিকেই এক ধরনের উগ্র চিন্তা ও কাজ হয়। এর জন্য প্রয়োজন, ঠাণ্ডা মাথায় পড়াশোনার। মানুষকে মানুষ হিসেবে বিচার করা তার নির্দিষ্ট কাজকর্ম অনুযায়ী। এই ধারণাটাও ভুল যদি নির্দিষ্ট বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা না থাকে। ‘তৌহিদ’ বলতে আরও কি বুঝি!

অনেক জায়গায় দেখা যায় আমরা অনেকে ধর্মবিদ্বেষী বা ধর্ম অনুসারীও নয়। অথবা ‘ধর্মে’ আমাদের সংশয় কাজ করে, জ্ঞান বা প্রজ্ঞা নয়। প্রজ্ঞার কথা যদি বাদ দিই। এ ক্ষেত্রে আমাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারে যে অসৌজন্যতা এবং উচ্ছৃঙ্খলা তৈরি হয় সেটা শুধুই ব্যক্তি বা কারোর অজ্ঞানের কারণে নয়, জ্ঞানের ব্যাপারে ‘অন্ধত্বের’ কারণে বা কিছু ভুল জানার কারণেও? হয়।

যেমন, সম্প্রতি শোনা গেছে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও বাঙালি সংস্কৃতির অনেক উৎসব ও এর আয়োজনকে বাধা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। এর সঙ্গে ধর্মীয় অন্ধত্বের বা তাওহিদের কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গি সম্পর্কের প্রশ্ন তো ওঠেই না তৌহিদের নামে। একে মূর্খতা বলেন, অন্ধত্ব বলেন। কিন্তু তৌহিদি শব্দ ব্যবহার না করি। তাহলে তৌহিদ কথার অর্থের অপব্যাখ্যা হয় ও হবে। এছাড়া ‘বিশ্বাসী’ আর ‘অনুসারী’ সব অর্থে একই চরিত্রের নাও হতে পারে। বিশ্বাসী হলে সে বিনয়ী হবে, শুধু অনুসারী হলে তার ভেতর উগ্রতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা থাকবে। কারণ শুধু অনুসারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশি আবেগপ্রবণ হয় বা উচ্ছৃঙ্খল হয়। এর সঙ্গেও তৌহিদের কোনো সম্পর্ক নেই।

আল্লাহর একত্বে যদি উপাসনা করি তাঁর-ই উপাস্য হই। সে ক্ষেত্রে আমরা কোনো মানুষের হৃদয় ভাঙতে পারি না। কোনো মানুষের ধর্ম বা কারোর কোনো আচার-আচরণকেও আঘাত করতে পারি না। কোনো মানুষের হৃদয় ভাঙা কাবাঘর ভাঙার মতো হয়ে যায়। আল্লাহর একত্বে যারা বিশ্বাসী, একটা মানুষকেও আমরা অন্যায় বা অমানবিকভাবে আঘাত করতে পারি না, খুন তো না-ই। কারণ, একজন মানুষকে বিনা অপরাধে খুন করলে সমগ্র মানবজাতিকে খুন করা হয়। আল্লাহর একত্বে যারা বিশ্বাসী, সবাই এটা জানেন।

তাওহিদে যারা বিশ্বাসী, তারা বিশ্বাস করি এবং মনে করি, আমার প্রতিবেশী সে খ্রিস্টান, হিন্দু বা অন্য যে কোনো ধর্মের বা ধর্মহীন হন। আল্লাহ বিশ্বাসীও না? হন। সে যদি ক্ষুধার্ত থাকে, তাকে ক্ষুধার্ত রেখে আমার খাওয়াকে আল্লাহ আমার ভালো কাজের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখেন না। আল্লাহর তাওহিদে যারা বিশ্বাসী, তারা বিশ্বাস করি, যে কোনো শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার শ্রমের উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া?, সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহর নির্দেশ। কোনো ব্যাপারেই ‘জাজমেন্টাল’ বা বিচারক না হওয়াও। বিচারের মালিক একমাত্র আল্লাহ একা নিজে। তাই কে ভালো, কে মন্দ। কে ঠিক, কে বেঠিক। এই ব্যাপারেও রায় দেওয়া বা সেটা বলার কোনো অধিকার কোনো ‘তৌহিদি’ মানুষ বা কোনো ‘জনতার’ই নেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার কথা ভিন্ন আলোচনা।

জঙ্গির সঙ্গে তাওহিদের কোনো সম্পর্কই নেই। দুটাই পরস্পরবিরোধী সত্তা। একটু গভীরে গিয়ে লক্ষ করলে দেখা যায়, উপমহাদেশে আমরা হাজার বছর হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও ধর্মে অবিশ্বাসী। পাশাপাশি বাস করেও আসছি। তখন কোনো কোন্দল ছিল না। ‘জঙ্গি’ কথাটাও শুনতাম না। আজকে এই আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানের এই উন্নতির যুগে এসে আবিষ্কার করি ‘জঙ্গি’। এটাকে জুড়েও দিয়েছি বিশেষ করে পশ্চিমাদের মদদে ও তাদের স্বার্থে কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক করে। ঠিক করলাম কি! আমাদের উগ্রতার জন্ম আমাদের ক্ষুদ্র শ্রেণিস্বার্থ ও ভুল রাজনীতি থেকে। অনেকে এটাকে ইদানীং আদর করে বলি, ‘ভূ-রাজনীতি’! এটা অনেক ক্ষেত্রে হচ্ছে ধর্মকে যারা ‘রাজনীতির বাণিজ্য’ হিসেবে বাজারজাত করে বিক্রি করি বিশ্ববাজারে। ক্রেতা, এর সরল সাধারণ বিশ্বাসীরা।

তৌহিদি বা তৌহিদ, কথার ব্যাখ্যা আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে পবিত্র কোরআন থেকে কিছু রেফারেন্স দিতে হয়। এই গ্রন্থের ষষ্ঠ (৬) সুরা ‘আনআম’-এর ১০৮ আয়াত বা বাণীতে বলা আছে; ‘এবং তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ডাকে তাদের তোমরা ‘গালি’ দেবে না। কেননা তারা অজ্ঞানবশত আল্লাহকেও গালি দেবে। এভাবে প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে কার্য সুশোভন করেছি, অতঃপর তাদের রবের কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন, অনন্তর তিনি তাদের কৃতকার্য সম্বন্ধে অবহিত করবেন।‘ এই কথার সহজ অর্থ থেকেও মনে করতে পারি ও বিশ্বাস করি, একজন তৌহিদি মানুষ বা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী মানুষ, কোনো ব্যাপারেই ‘জাজমেন্টাল’ হতে পারেন না। সেটা অন্যায়। সেটাতে কেউ জঙ্গি আচরণ করলেও ‘তৌহিদি জঙ্গি’ কথার কি অর্থ! যে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান সামান্য সেই বিষয়ে আমাদের যে কোনো কথা, শব্দ বা তার ব্যাখ্যা প্রয়োগ এলোপাতাড়ি হলে, সেটা সত্যকে মিথ্যা করে দিতে পারে না।

অনেকে আমরা পবিত্র কোরআনের নবম সুরা, ‘সুরা তওবাহ’ ভুল ব্যাখ্যা করে ইসলামকে অনেকটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিয়ে ফেলি। সেটাও ভুল। ইতিহাসে মূসা এবং বাদশাহ ফেরাউনের কাহিনি জানা দরকার। সেখানেও প্রমাণ মিলবে তৌহিদি কথার অর্থ কী।

একজন তৌহিদি মানুষ পবিত্র কোরআনের তৃতীয় সুরা, সুরা ইমরানের ১০২ আয়াতের কথাও জানেন। যেখানে বলা হয়, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং দেখো তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মরো না।’ এক ব্যক্তি বা কোনো জনপদের জনগোষ্ঠী যদি তার হৃদয়ে এই বিশ্বাসকে ধারণ করে চলেন, তাহলে কোনোভাবেই সে জঙ্গি তো হতে পারেনই না। এবং পৃথিবীতে তার কোনো কিছুর প্রতি মোহ বা দুর্বলতাও থাকতে পারে না, একমাত্র তার প্রতিটা কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং তার নির্দেশে করার বাইরেও সে করে না। এটাও তৌহিদের মূল কথা। তৌহিদি জনতা হতেই পারে অর্থাৎ আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী। তাঁর উপাসনাকারী। কিন্তু ‘তৌহিদি জঙ্গি’ কথাটা রাজনৈতিক রেটরিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কাউকে বিভ্রান্ত করার অর্থে ব্যবহার হয়।

পরিশেষে বলি, ‘তৌহিদি’ কথার প্রকৃত আরও অর্থ সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহর প্রায় ৯৯ নাম যা আমরা অনেকেই জানি। সেটা পড়লে এবং দেখলেও বোঝা যায়, এক আল্লাহ বলতে কী বুঝি। তাঁর গুণগত বৈশিষ্ট্য কী কী। সেখানে তৌহিদিকে কোনোরকম ব্যঙ্গ বা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করলে সেটা অবাস্তব এবং মিথ্যাচারিতা। আল্লাহর কয়েকটা নামের উল্লেখ করে শেষ করি। ‘আল হক’, অর্থাৎ তিনি সত্য। তাঁর অস্তিত্বের কোনো পরিবর্তন নেই। ‘আল ওয়াহিদ’, অর্থ তিনি ইউনিক। তাঁর প্রতিটা সিদ্ধান্তেও তিনি একক। ‘আল মুখসীদ’, অর্থাৎ তিনি ইকুইটেবল, মানে তিনি প্রতিটা কাজ করেন সুনির্দিষ্ট মাপে ও শৃঙ্খলায়। এই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের তৌহিদি বলা হয়। এক কথায় যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এখানে জঙ্গির কোনো অস্তিত্বই নেই। যে কোনো মানুষের ‘জঙ্গি আচরণ’ মানুষের অজ্ঞানতায় হয় জ্ঞানে না।


মাহমুদ রেজা চৌধুরী : লেখক ও সামাজিক-রাজনৈতিক বিশ্লেষক