বিডিআর হত্যার বিচার হোক
বিডিআর বিদ্রোহ কথাটা আমি মানতে নারাজ। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে জাতির বিশুদ্ধতাপ্রাপ্তি তথা সংস্কার অপূর্ণ থেকে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনী থেকে তদন্ত কমিশন করা হয়েছিল, যে কমিশনের প্রধানতম ব্যক্তি ছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ বাংলাদেশ জুলাই রেভ্যুলেশনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে বিধায় জনপ্রত্যশাÑ বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হোক।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে জনগণের দাবি তাই তাদের সময়ের মধ্যে সঠিক বিচার করে যাওয়া। এটা না হলে সরকারকে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। বাংলাদেশের জনগণ চায় প্রধান উপদেষ্টা সেদিন সশরীরে উপস্থিত হয়ে কবর জিয়ারত করুক। তার সামরিক উপদেষ্টা বা সামরিক সচিব দিয়ে ফুল পাঠিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর এই বীরদের অসম্মান না করাটা অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ।
সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের সংগঠন রাওয়াকে এ ব্যাপারে কার্যকর হতে হবে। এটা না পারলে তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনবে জনগণ।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
এর ব্যত্যয় হলে জনগণ ভাববে এরাও চায় না বিডিআর হত্যার বিচার হোক।
২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনাদিবস’ ঘোষণা করা হোক। এদিন রাষ্ট্রীয় পতাকা অর্ধনমিত হতে হবে। বাংলাদেশের স্কুলের শিক্ষাক্রমে এই দিবসের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, কারণ এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এই দিনটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে নাজুক বিষয় ছিল এই দিনটি। তাই তারা যারাই বিডিআর হত্যার বিচার নিয়ে কথা বলেছে ও কলম ধরেছিল, তাদের সাইজ করেছে।
২০১০ সালে ফেসবুকে ‘শহীদ সেনাদিবস’ নামে একটি পেজের মাধ্যমে শুরু করেছিলাম আন্দোলন। এর কারণটাও আজ ১৫ বছর পর বলতে পারছি। বিডিআর হত্যায় নিহতদের কবরের উল্টোদিকে আমার নবজাতিকা কন্যার কবর। আমি যতবারই গিয়েছি, ততবারই আত্মগ্লানিতে ভুগেছি। এর পর পেজটি শুরু করে আবেগ দিয়ে ওই দিনটাকে ‘শহীদ সেনাদিবস’ করার জন্য জনমত গঠনে উদ্যোগী হই। মাসখানেক পর হতাশাগ্রস্ত হয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমী (আয়না ঘর) স্যারকে হতাশার কথা জানালে তিনি আমাকে বলেন, ফেরদৌস তুমি একটুও ঘাবড়াবে না; চালিয়ে যাও। রাসুল (স.) যখন ইসলামের ডাক দেন তখন একই অবস্থা ছিল; কিন্তু পরে পিপীলিকার মতো লোক জড়ো হয়।
একটু আশা নিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবের সামনে যখন দাঁড়াই, তখন দেখি হাজার হাজার জনগণ। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে যায় শতাধিক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
প্রেসক্লাবসহ বাংলাদেশের ৭টি স্থানে একই দাবি নিয়ে মানববন্ধন হয়। কর্নেল মানিষ দেওয়ান স্যার রাঙামাটিতে নেতৃত্ব দেন। লন্ডন ও কানাডায় একই কার্যক্রম হয়। লন্ডনে আমার প্রিয় বন্ধু মেজর (অব.) শাহ আলম নেতৃত্ব দেন। প্রচণ্ড উৎসাহ পাই রাওয়ার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান বীরপ্রতীকসহ রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল হক স্যারের। এ ছাড়াও অনেকে এগিয়ে আসেন। কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের শুকরিয়া জানাই। বিখ্যাত গায়ক হায়দার ভাই সেদিন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার হৃদয়স্পর্শী গান নিয়ে ‘কতটকু ...। কত প্রদীপ শিখা জ্বালালে জীবন আলোয় সিক্ত।’
আমরা সেদিন ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম ‘ডব ঋধরষবফ ঞড় চৎড়ঃবপঃ ণড়ঁ’
এবার আর দাঁড়াতে চাই না সেই ব্যানার নিয়ে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে একজন অবসরপ্রাপ্ত গর্বিত সৈনিক হয়ে নিবেদন করছিÑ চলুন প্রয়োজনে জুলাই বিপ্লবের মতো আবার দাঁড়াব ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে সরকার ‘শহীদ সেনাদিবস’ ঘোষণা না দিলে।
খুব বেশি চাইলাম কি এক সৈনিক, যারা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জীবন দিতে গর্ববোধ করে শপথ নেয়?
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!
মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস : কলামিস্ট
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক