জাতীয় নাগরিক কমিটি : ভবিষ্যতের রাজনীতির এক নতুন দিশা
আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের কাঁধে। তারা যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে তা আমাদের জন্য শুধু চিন্তার বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হতে পারে। বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে নেতৃত্বের জায়গা শুধু বয়স কিংবা পরিচিতির ওপর নির্ভরশীল নয়। মেধা, সাহস এবং কর্মই মানুষকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষকে মেধাবী, সাহসী এবং কর্মঠ করে গড়ে তোলা, যাদের হাত ধরেই আগামীর রাষ্ট্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। আর এ লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যা দেশের জন্য একটি নতুন দিশা দেখানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
মেধা, সাহস ও কর্ম : নেতৃত্বের মূল সত্তা : একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সর্বোত্তম নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই নেতৃত্ব কীভাবে আসবে? এটি আসবে সেসব ব্যক্তির কাছ থেকে, যারা তাদের মেধা, সাহস এবং কর্মের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। নেতৃত্বের মূল উপাদান যদি এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে নিহিত থাকে, তবে সেখানে বয়সের কোনো বাধা থাকতে পারে না।
মেধা একজন নেতার সবচেয়ে বড় সম্পদ। মেধা বলতে শুধু একাডেমিক শিক্ষাকে বোঝানো হচ্ছে না, বরং সেই ব্যক্তি যে সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী, তেমন একজন ব্যক্তি। মেধা একজন নেতাকে তার সমস্যাগুলোর সমাধান বের করার জন্য নতুন পথ খুঁজে বের করার সক্ষমতা প্রদান করে। সেই সঙ্গে একজন নেতার প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা তাকে দেশের নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া সাহস একজন নেতার জন্য অপরিহার্য। সাহসী নেতা কখনো বিপদকে ভয় পায় না। সমাজের অসঙ্গতিগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সংগ্রাম করতে সে কখনো পিছপা হয় না। সাহসী নেতা যখন জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সত্য কথা বলে, তখন সে বাস্তবতার চেহারা সবার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মীরা এই সাহসিকতা ধারণ করে দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা কখনো তাদের আদর্শ থেকে পিছপা হননি, বরং দেশের উন্নতির জন্য সর্বদা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
কর্ম একজন নেতার চূড়ান্ত পরিণতি। শুধু কথায় কিছু হয় না, কাজে ফলপ্রসূতা আনতে হয়। জাতির নেতৃত্ব যদি শুধু কথার ওপর নির্ভর করে থাকে, তবে তা শিগগিরই মূর্খতায় পরিণত হবে। তেমন একজন নেতা নয়, যার কর্মই তাকে জনগণের হৃদয়ে স্থান করে দেয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মীরা এ বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, প্রতিটি পরিকল্পনা, প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি পদক্ষেপকে কার্যকরী করতে হবে, তবেই তা জাতির কল্যাণে সহায়ক হবে।
ভবিষ্যতের রাষ্ট্রকল্প বাস্তবায়নে : জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামী দিনের রাষ্ট্রকে রূপ দিতে একত্রে কাজ করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলছে। রাষ্ট্রের উন্নতি এবং জনগণের কল্যাণের জন্য একতা, সহানুভূতি এবং জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত নিজেদের অদক্ষতা ও দুর্বলতা না দেখে আমাদের শক্তি এবং সম্ভাবনাকে চিনতে শেখা। শুধু একত্রে লড়াই করলেই আমরা ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের কাক্সিক্ষত রূপ সৃষ্টি করতে পারব। এখানে সবার কণ্ঠে একযোগী আন্দোলন ও পরিকল্পনার প্রয়োগ জরুরি। এজন্য প্রয়োজন একটি সঠিক নেতৃত্ব, যা আমাদের দেশে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের প্রতিটি নাগরিককে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করছে। তারা বিশ্বাস করেন যে, জনগণের শক্তির ওপর ভিত্তি করেই একটি রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব। জনগণ যদি তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে প্রস্তুত হয়, তবে কোনো শক্তিই তাদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। এই কমিটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে জানানো এবং তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে শুধু রাষ্ট্র নয়, জনগণও সমান গুরুত্ব পাবে।
নাগরিক সচেতনতা এবং জাতির উন্নতি : এমতাবস্থায়, আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিক কমিটির উদ্যোগে অংশগ্রহণ করা, তাদের সহযোগিতা করা এবং নিজ নিজ এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এই সচেতনতা রাষ্ট্রের উন্নয়নের পথকে সুগম করবে। তাতে করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। একত্রে কাজ করার মাধ্যমে আমরা দেশকে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারি।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
শেষ কথা : বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, তরুণ প্রজন্মের নেতা, সমাজকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বÑ সবার জন্যই সময় এসেছে নিজেকে আরও উন্নত, কর্মঠ এবং যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আমাদের লক্ষ্য শুধু রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং এক একটি অগ্রসর জাতি গঠনের দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
‘একসঙ্গে লড়ব, ইনশাআল্লাহ’ এই স্লোগান আমাদের পথপ্রদর্শক, যা প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে লুকানো শক্তি উদঘাটন করতে সাহায্য করবে। মেধা, সাহস ও কর্মÑ এই তিনটি মন্ত্র নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে, তবেই আমরা আমাদের প্রিয় জাতির উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে পারব।
সাইফুল্লাহ হায়দার : কেন্দ্রীয় সংগঠক, জাতীয় নাগরিক কমিটি
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!