মাস্ক পরেও হচ্ছে না শেষরক্ষা
দূষণের কারণে বছরে মৃত্যু লাখের বেশি
রাজধানীর বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিনের যাতায়াতে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল আলম (ছদ্মনাম) অ্যাজমার কারণে নিয়মিত মাস্ক পরে গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। তবে সম্প্রতি দূষণের মাত্রা বাড়ায় এতে আর স্বস্তি পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সকালে মাস্ক পরে বের হই। কিন্তু রাস্তায় বেরুলেই বুঝতে পারি, এটা আমাকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারছে না। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাসের ভেতরেও ধুলা ঢোকে। ফলে মাথা যন্ত্রণা আর চোখ জ্বালার মতো সমস্যা নিয়েই দিন শুরু হয়। একই অভিযোগ মানিকনগর-মালিবাগ রুটের যাত্রী নজরুল ইসলামসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাতায়াত করা প্রতিটি মানুষের। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জনের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণ দায়ী। রাজধানীতে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই বায়ুর মান খারাপ থাকে। গবেষকদের মতেÑ নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, এলার্জিজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। ব্যক্তিগত সুরক্ষানীতি মেনে না চললে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক একেএম লুৎফর রহমান বলেন, শীতকালে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সাধারণ মাস্ক দিয়ে এ দূষণ ঠেকানো সম্ভব নয়, প্রয়োজন বিশেষ ফিল্টারযুক্ত মাস্ক। তবে দূষণ কমাতে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল রবিবার সকালেও বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৩টি শহরের মধ্যে শীর্ষে ছিল ঢাকা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ছিল ৩৩৯, যা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে ধরা হয়। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে বায়ুর মান মারাত্মক দূষিত ছিলÑ ইস্টার্ন হাউজিং ২-এ ৬৪১, সাভারের হেমায়েতপুরে ৪৫১ ও শানস্তা ফোরামরে ৪৪১।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৫২ গুণ বেশি। এমন অবস্থায় পরিবেশ অধিদপ্তর সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস জানায়, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে রাজধানীবাসী একদিনের জন্যও নির্মল বায়ু পায়নি। তাদের গবেষণা বলছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দূষণ উৎস চিহ্নিত করা গেলেও তা কমানোর উদ্যোগ যৎসামান্য। প্রকল্পনির্ভর কার্যক্রম দিয়ে দূষণ ঠেকানো যাবে না। মানুষ সারাদিন মাস্ক পরে থাকতে পারবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড মেনে চললে প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছে সিআরইএ। গবেষণা অনুযায়ী, যদি বাংলাদেশ জাতীয় বায়ুমানের মানদণ্ড (৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) পূরণ করতে পারে, তবে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ, আয়ুষ্কালজনিত সমস্যা ২১ শতাংশ এবং অক্ষমতা নিয়ে বসবাসের বছর ১২ শতাংশ কমে আসবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক