বৃহত্তম হিমশৈল
উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল প্রতিনিয়ত নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার খবরও পুরনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর বাইরেও সেখানে ঘটছে নানা পরিবর্তন। তিন দশক আগে অ্যান্টার্কটিক উপকূলরেখা থেকে যে আইসবার্গ বা হিমশৈল আলাদা হয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে ঠেকেছিল, সেটি এখন আবার নড়াচড়া শুরু করেছে। বিবিসি।
‘এ২৩এ’ নামের ওই বিশালাকার বরফখণ্ডকে বলা হয় পৃথিবীর বৃহত্তম আইসবার্গ। ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিক উপকূলরেখা থেকে সেটি বিচ্ছিন্ন হয়। এরপর দ্রুত সরে গিয়ে ওয়েডেল সাগরের মাঝে আটকে বরফদ্বীপে পরিণত হয়। আইসবার্গটির আয়তন ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা আকারে গ্রেটার লন্ডনের দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছর এটিকে বেশ গতিতেই সরে যেতে দেখা গেছে। আর এখন এর বরফ গলতেও শুরু করেছে।
আইসবার্গটি কেবল চওড়াতেই বিশাল নয়; এর পুরুত্ব ৪০০ মিটার বা ১ হাজার ৩২০ ফুট। যেখানে ইউরোপের সব থেকে উঁচু টাওয়ার লন্ডন শার্ডের উচ্চতা ৩১০ মিটার। ‘এ২৩এ’ হোয়াইট কন্টিনেন্টের ফিলচার আইস শেলফের অংশ ছিল। ওই সময়ে সোভিয়েত ঘাঁটি দ্রুজনায়া-১ ছিল সেখানে। এটি এক সময় হারিয়ে যাবে ভেবে মস্কো সেখান থেকে সরঞ্জাম অপসারণের অভিযানও চালিয়েছিল।
তবে উপরে সমতল ও চারপাশে খাড়া ঢাল আকৃতির এই হিমশৈলের তলা ওয়েডেল সাগরের তলদেশের সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকার কারণে সেটি সরে যায়নি। কিন্তু এতদিন সরে না গেলেও প্রায় ৪০ বছর পর কেন আইসবার্গটি সরে যাচ্ছে, সেটিই এখন চিন্তার কারণ বিজ্ঞানীদের।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
ব্রিটিশ দূর-অনুধাবন বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ফ্লেমিং বলেন, ‘আমি কয়েকজন সহকর্মীকে এই বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ভাবছিলাম সেখানে পানিতে তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন এর নড়াচড়ার কারণ হতে পারে কিনা। কিন্তু সবার মতামত হলো, সেই সময়টি চলে এসেছে।’ তার ভাষ্য, ‘১৯৮৬ সালে এটি জায়গা বদল করে। কিন্তু এর আয়তন কমতে শুরু করেছে। ফলে সাগরের তলদেশের সঙ্গে আর পোক্তভাবে আটকে থাকছে না। নড়তে শুরু করেছে।’ ২০২০ সালে আইসবার্গটিকে প্রথম সরে যেতে দেখেছেন বলেও জানান এই গবেষক।
সাম্প্রতিক সময়ে এটি সরে যাওয়া শুরু করেছে। বাতাস ও সাগরের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে ভেসে অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের উত্তর প্রান্ত অতিক্রম করছে। সরে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছে, এটি অ্যান্টার্কটিকা সার্কামপোলার স্রোতে গিয়ে পড়বে। ওয়েডেল সেক্টরের বেশির ভাগ হিমশৈল দক্ষিণ আটলান্টিকের দিকে সরে যাচ্ছে। এরা ‘আইসবার্গ অ্যালি’ নামে পরিচিত।
যত বড়ই হিমশৈল হোক না কেন, সরে গিয়ে এবং গলে গিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ‘এ২৩এ’ হিমশৈলের কাছাকাছি গিয়ে তার অগ্রগতি অনুসরণ করবেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
এই বিশাল আকৃতির হিমশৈল যদি দক্ষিণ জর্জিয়ার দিকে আসে, তাহলে লাখ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাদের মধ্য রয়েছে- সিল, পেঙ্গুইন ও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখি। বিশেষ করে যারা এই দ্বীপে বংশবিস্তার করে, তারা বেশি ক্ষতির শিকার হবে। শুধু এটাই না, প্রাণীদের স্বাভাবিক চলাচলের রাস্তায় বাধা তৈরি করতে পারে এই হিমশৈল। তাদের বাচ্চাদের জন্য খাবার সংগ্রহ এবং তা খাওয়ানোর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এটি।
কিন্তু এই হিমশৈলগুলোকে শুধু বিপদের কারণ হিসেবে ভাবলে ভুল হবে। পরিবেশে এদেরও গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই হিমশৈলে জমে থাকা ধূলিকণা গলে পড়ে সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি করবে। উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের ডক্টর ক্যাথরিন ওয়াকার বলেন, অনেকভাবেই এই হিমশৈল জীবন দিয়ে থাকে। এগুলো অনেক জৈবিক কার্যকলাপের মূল বিন্দুও বটে।
আরও পড়ুন:
হাজার বছরের পুরনো মমি উদ্ধার