এইচএমপিভি : আমরা সচেতন হই
এইচএমপিভি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে শীত ও বসন্তকালে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ভাইরাসগুলো লড়াই করে খুব সহজেই টিকে থাকতে পারে, তাই শীতের সময় প্রকোপ বেশি থাকে। শীতের সময় মানুষ ঘরের মধ্যে বেশি সময় থাকে। ঘরের বদ্ধ পরিবেশ এই ভাইরাস ছড়ানোয় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
উত্তর চীনেও দেখা দিয়েছে এইচএমপিভি সংক্রমণ। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা যায়। শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে বেশি আক্রান্ত হয়।
এইচএমপিভির সংক্রমণ এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অসুখ হলে তো ডাক্তার আছে, চিকিৎসা দেবে, কিন্তু প্রতিরোধ সবার জন্য ভালো। সংক্রমণ এড়াতে জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরতে হবে, শ্বাসতন্ত্রের বড় কোনো জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ, হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে হবে।
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে প্রথম এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। প্রতিবছরই দেখা যায় কমবেশি শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন অথবা বিভিন্ন রোগের জটিলতা আছে এবং যাদের বয়স ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিমানবন্দরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সবাইকে মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছেÑ যাত্রী, স্টাফ ও দর্শনার্থীদের। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং একটু অসুস্থ বোধ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
আতঙ্কিত না হয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলাই যথেষ্ট।
বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রিপোর্ট করতে হবে।
এইচএমপিভি আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যাত্রীদের আনার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ফ্লাইট চলাকালে কোনো যাত্রীর জ্বর বা কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জানাতে হবে।
এই শীতে আসলে সবার যেটা দরকার সেটা হলো একটু সচেতন থাকা এবং এর কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
এইচএমপিভির সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং কিছু ক্ষেত্রে চামড়ায় অ্যালার্জি দেখা যায়। বিশেষ করে কিছু দুর্বল জনগোষ্ঠী, যারা গুরুতর অসুস্থ, এর মধ্যে রয়েছে শিশু এবং ৫ বছরের নিচের বয়সী শিশু, বয়স্ক, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, যেমনÑ হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), ইমিউনো-কমপ্রোমাইজড রোগী এবং কো মরবিড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশি পরিমাণে ঝুঁঁকিতে থাকছে।
আমরা একটি মৃত্যুও চাই না। যে কোনো মানুষই অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিলে সহজে ভালো হয়ে যায়। মৃত্যুঝুঁকি একদমই কমে আসে। আসুন আমরা সচেতন হই।
বেশির ভাগ রোগীর মৃদু উপসর্গ থাকে। তাই তাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ অসুস্থতা ৭ দিনে ভালো হয়ে যায়। ভাইরাল ফিভার সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, যদি না কোনো সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়। যদি সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয় তখন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু উপসর্গগুলো যদি খারাপ হয় এবং শ্বাসকষ্ট, তীব্র কাশি হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়বে।
ভাইরাসটি এখনও মহামারি পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশে এর শনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা দুই দশক আগে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। এতে ফ্লুর মতো উপসর্গ, যেমনÑ কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা পৃষ্ঠ বা বস্তু স্পর্শ করে (দরজার হাতল, খেলনা, ফোন ইত্যাদি) আক্রান্ত হয়। আর বাতাসে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষণ দেখা দিলে নিজেকে আইসোলেশনে রাখতে হবে, পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে নিজেকে আলাদা রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!
ডা. আয়শা আক্তার : উপপরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা