শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসনে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের ধাক্কা, পদোন্নতির হিড়িক এবং বঞ্চিত কর্মকর্তাদের নিরবচ্ছিন্ন দাবি-দাওয়ার মুখে বিশৃঙ্খলা নেমে আসে জনপ্রশাসনে। সর্বশেষ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব ঘিরে এখন উত্তাল প্রশাসন। স্বাভাবিকভাবেই কাজেকর্মে চলছে স্থবিরতা। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময়ে শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসনে। আগস্টের পর বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে উত্তরণে যতটুকু আশা জেগেছিল, তা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশের কারণে ভেস্তে গেছে। বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যে শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল।

সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাবটি ঘিরে প্রভাবশালী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারাও এর বিরোধিতা করছেন। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা এর প্রতিবাদ জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছেন। উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা কমানোর প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৬৪ জেলার ডিসি। কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে, অনেককে পাঠানো হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসরে, পদায়ন করা হচ্ছে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।

জানা গেছে, গত সাড়ে চার মাসে জনপ্রশাসনে প্রায় সাড়ে ৫০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে শতাধিক কর্মকর্তার। ওএসডিও করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে। তাদের স্থলে অবসরে যাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে চুক্তিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সাড়ে চার মাসে ২৩ কর্মকর্তাকে সচিব করা হয়েছে। ১৭ জন কর্মকর্তা গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অতিরিক্ত সচিব ১৩৫, যুগ্ম সচিব ২২৮ এবং উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩৪ জন। ১৪টি মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চুক্তিতে।

আন্দোলনের মুখে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি ও পদায়ন করতে নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হচ্ছে। অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সচিব কিংবা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে, যা সমালোচনার সৃষ্টি করে। এ জন্য ভুলগুলো শুধরে বারবার সিদ্ধান্ত বদলাতে দেখা যাচ্ছে প্রশাসনে। নীতি-নির্ধারণী পদের কর্মকর্তাদের অনভিজ্ঞতা সংকটকে আরও গভীর করেছে। অন্যদিকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ায় পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে হতাশ ও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনে সাবেক অর্থসচিব ও বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত দাবি করে ১ হাজার ৫৪০ জন এ কমিটির কাছে আবেদন করেন। এর মধ্যে ৭৬৪ জনকে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করে কমিটি।