মোজাম্বিকে লুটপাটে নিঃস্ব হাজারো বাংলাদেশি
দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে এক রাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রায় হাজারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। যাদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। হাজার কোটি টাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হারিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন সেখানকার প্রবাসীরা। নানা ভয় আর উৎকণ্ঠায় দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন তারা। লুটপাটে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কমনা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
জানা গেছে, মোজাম্বিকে বসবাস করেন প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী। এদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সেখানে তারা ব্যবসাবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। দেশটিতে ৭০ শতাংশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ভারতীয়রা। চায়না আর বাংলাদেশি প্রবাসীরা সেখানে ব্যবসাবাণিজ্য করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি মোজাম্বিকে জাতীয় নির্বাচনের ফল কেন্দ্র করে সহিংসতা চলছে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে লুটপাট। এক্ষেত্রে টার্গেট করা হচ্ছে প্রবাসীদের। গত সোমবার রাতে সবচেয়ে বেশি লুটপাট ও ভাঙচুর হয়েছে মাতুল, বোয়ানি ও সিমুই শহরে। সেখানে বাংলাদেশিদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এতে এক রাতেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি। এ ছাড়া দেশটিতে বর্তমানে শহর-গ্রাম সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাংলাদেশিরা।
গত ২৪ অক্টোবর ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দলকে নির্বাচনে ৭০ শতাংশের বেশি ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণার পর সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। ফল প্রত্যাখ্যান করে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত সোমবার হাইকোর্টের এক রায়ে ফ্রেলিমো দলকেও সরকার ঘোষণা করে। এরপর আবার দেশটিতে শুরু হয় সহিংসতা ও লুটপাট। বর্তমানে দেশটির রাজধানী মাপুতো সিটি, সিমুই সিটি, বেইরা সিটি, নামপুলা সিটি, মুনফোলা, নাখালাসহ প্রায় সব সিটি শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন:
ডেমরায় এক কক্ষে কিশোরী ও যুবকের মরদেহ
প্রবাসীরা জানিয়েছেন, দেশের মায়া ত্যাগ করে তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় পাড়ি জমান দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে। নিজের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা ও পরিবারকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন থাকে তাদের চোখে। এমন আশায় প্রবাসে পরবাসী হলেও আজ তাদের চোখে ঘুম নেই। বর্তমানে দেশটিতে রাজনৈতিক সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় দেশে ফেরার আকুতি জানান তারা।
দুই বছর আগে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে পাড়ি জমান কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দা মুজিবুল করিম। দেশটির রাজধানী মাপুতো সিটির পাশে মাতুলে দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সোমবার রাতে তার সুপার শপে চালানো হয় লুটপাট। জীবন বাঁচাতে দোকান ছেড়ে আশ্রয় নেন অন্যত্র। গতকাল আমাদের সময়কে মুজিব বলেন, নির্বাচনপরবর্তী মোজাম্বিকে চুরি-ডাকাতি এবং খুনসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। এসব অপরাধীর টার্গেট মূলত প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার আমার দোকান থেকে ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমিসহ অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী নিঃস্ব হয়ে গেছি। নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছি।
আরও পড়ুন:
আফরোজা পারভীন পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
আরেক প্রবাসী ও বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা রাশেদ হোসাইন বলেন, আমার সুপার শপের দোকান আছে। কোটি টাকার জিনিসপত্র লুটপাট-ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। এখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সহিংসতায় পড়া ভারতীয় বাসিন্দাদের ডাটা সংগ্রহ করছে ভারত সরকার, যাতে পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্রুত যেন তাদের সরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আমাদের এই পরিস্থিতি নেই, যা করছি নিজেরাই। আমরা বাংলাদেশি সরকারের সহযোগিতা চাই।
কক্সবাজারের বাসিন্দা প্রবাসী শাহ নেওয়াজ বলেন, মোজাম্বিকে বাংলাদেশের এম্বাসি নেই। পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোজাম্বিকের অনাবাসিক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সহিংস পরিস্থিতির কারণে রাস্তাঘাটে বের হওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসাবাণিজ্য হারিয়েও আমরা নিঃস্ব। আমরা দেশে ফিরতে চাই।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু ভর্তি ৬৪৫