সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ নীরব এলাকা ঘোষণা

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর

গোলাম সাত্তার রনি
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ নীরব এলাকা ঘোষণা

রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে ক্রমাগত। যেখানে ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তি সাময়িকভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, সেখানে রাজধানীতে শব্দের মানমাত্রা ১০০ ডেসিবেল বা আরও বেশি। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সচিবালয়, আগারগাঁওসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকাকে সম্প্রতি ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ‘ঢাকঢোল’ পিটিয়ে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তদারকি এবং প্রচার-প্রচারণার অভাবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয় অনেক চালক এখনও জানেন না, এলাকাটি নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, সরকারঘোষিত এসব নীরব এলাকাতেই শব্দের মাত্রা দিনের বেলায় সাধারণ মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি এবং রাতে তা আড়াই গুণের বেশি থাকছে। অন্য সব এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা আরও বেশি। সরকার এসব এলাকা নীরব ঘোষণা করলেও শব্দদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ চলমান না থাকায় তা শুধুমাত্র ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সব কিছুই চলছে আগের মতোই।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কার্যক্রম। বিমানবন্দর এলাকায় নীরব এলাকা ঘোষণা করার পর গত মাসে কয়েক দিন জনসচেতনতা কার্যক্রম দেখা গেলেও গত ২ সপ্তাহ ধরে তাও থমকে গেছে। সচেতনতার পাশাপাশি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকার কথা থাকলেও তাদের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ফলে নীরব এলাকা আর নীরব নেই; এলাকাজুড়েই এখন শব্দে সরব। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, সিএনজিচালিত

অটোরিকশা, মোটরসাইকেল- সবাগুলোতেই প্রতিনিয়ত হর্ন বেজেই যাচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই হর্ন বাজাতে দেখা যায় চালকদের।

পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দদূষণ রোধ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে নীরব এলাকা হচ্ছে- সচিবালয়, আগারগাঁও এবং বিমানবন্দর এলাকা। বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এটা শেষ হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ১০টি এলাকা ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করার কাজ চলমান রয়েছে। শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যানবাহনের চালক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত সভা চলমান রয়েছে। শব্দদূষণের জন্য জরিমানার যে বিধান রয়েছে তা খুবই অল্প, এটা রিভিউ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০০৬ সালের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫০ ডেসিবল ও রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪০ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল এবং বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল গ্রহণযোগ্য মাত্রা। শিল্প এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল।

সম্প্রতি মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদ গেট, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি, আগারগাঁও, সচিবালয়সহ ৪৪টি স্থানে জরিপ চালায় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)। তাদের জরিপে দেখা গেছে, আবাসিক ও মিশ্র এলাকায় দিনে দেড় গুণ এবং রাতে দুই গুণের বেশি শব্দ হয়। বাণিজ্যিক এলাকায় দিন ও রাতে নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি শব্দ হচ্ছে। আর সরকারঘোষিত নীরব এলাকাতেই শব্দের মাত্র দিনের বেলায় সাধারণ মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি এবং রাতে তা আড়াই গুণের বেশি থাকছে। জরিপে আরও ওঠে এসেছে, শব্দদূষণের প্রধান উৎস যানবাহন চলাচল ও হর্ন, নির্মাণকাজ, কলকারখানার যন্ত্রপাতি চলা, গান বাজানো, জেনারেটর চালু রাখা ইত্যাদি। আর শব্দদূষণের জন্য ২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড ১০ হাজার টাকা।

জানা গেছে, বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করে গ্রীন ভয়েস নামে একটি সংগঠন। বাপা ও গ্রীন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির আমাদের সময়কে বলেন, বিমানবন্দর এলাকা নীরব এলাকা ঘোষণা করার পর আমরা ১৪ দিন সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করি। এখন কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে।

আলমগীর কবির আরও বলেন, শব্দদূষণ রোধে সচেতনতার পাশাপাশি আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ প্রয়োজন এবং এটা মিডিয়ায় প্রচার হওয়া দরকার। বিদ্যমান আইন সংশোধন করে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানোর কার্যক্রম চলমান। ধীরে ধীরে সারাদেশে শব্দ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।