ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাই মিলে কাজ করতে হবে
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জ্বর। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের একমাত্র বাহক। মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়।
এডিস মশা দিনের বেলায়, সাধারণত ভোরে এবং সন্ধ্যায় কামড়ায় কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এই ভাইরাসের রূপ পরিবর্তন করতে করতে সারাদিনের যে কোনো সময় কামড়াতে পারে। তাই যখনই ঘুমাবে তখন মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। স্ত্রী এডিস এজিপটি মশা ডেঙ্গু ভাইরাসকে এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে সংক্রামিত করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত খেয়ে মশা সংক্রমিত হয়। তারপরে সেই মশা যখন একটা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন সে ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে।
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো হচ্ছে-
জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, এবং ত্বকের ফুসকুড়ি।
ডেঙ্গুর চারটি সেরো টাইপ ডেন ১, ২, ৩, ৪। যখন কোনো ব্যক্তির যে কোনো একটি ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ হয়, তার দেহে সারা জীবনের জন্য ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি হয়ে যায়। চারটির মধ্যে সবগুলো দিয়েই সংক্রমণ ঘটাতে পারে। মহামারির সময় চার প্রকারের ভাইরাসই পাওয়া যায়।
বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের কোনো নির্দিষ্ট এন্টি-ভাইরাল চিকিৎসা নেই। সাহায্যকারী চিকিৎসা হিসেবে জ্বর কমানোর ওষুধ, তরল পদার্থ দেওয়া এবং সম্পূর্ণ বিশ্রামের সুপারিশ করা হয়। ডেঙ্গুর জটিলতার মধ্যে রয়েছে হেমোরেজিক জ্বর, যার চিকিৎসা না করলে বেড়ে গিয়ে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে পরিণত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
গ্রামীণ খেলা হারিয়ে যাচ্ছে কেন
ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম
ডেঙ্গু জ্বরের একটি মারাত্মক জটিলতা। এই জটিলতা বেশি তৈরি হয় তখনই যখন একজন ব্যক্তি যিনি ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তিনি আবার একটি ভিন্ন ডেঙ্গু ভাইরাস অর্থাৎ অন্য একটি সেরো- টাইপ দ্বারা আক্রান্ত হন, তার ফলে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের প্রবণতা হয় এবং একাধিক অঙ্গের অকেজোর কারণে মৃত্যু হয়। তবে কেউ যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক সিন্ড্রোমে চলে যান তাহলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
খুব বেশি দেরি করলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায় তখন আইসিইউতে নিয়েও রুগিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না তাই ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত না হয়ে শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সচেতন হতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।
প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ জ্বর হওয়ার বা ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে সাধারণত এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন বা ঘঝ১পরীক্ষা করলে পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে ননস্ট্রাকচারাল প্রোটিন দেখা হয়।
পঞ্চম দিন থেকে এনএসওয়ান নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। শুরুতেই হং১ এবং সিবিসি (ঈইঈ) কাউন্ট দেখা হয়।
জ্বরের পাঁচ দিন হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আইজিএম, আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে।
আরও পড়ুন:
বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশি ডেঙ্গু ফিভার নামে প্রচলন শুরু হয়েছে। তার আগে ঢাকা ফিভার নামে সবাই জানত।
একবার যখন ডেঙ্গু কোনো দেশে ঢোকে সেখান থেকে এ রোগটি বের হয় না। তাই একেবারে তো নির্মূল করা সম্ভব না। কিন্তু প্রতিরোধ করলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয় না।
তাই প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। ২০০০ সাল থেকে শুরুর পর কিছু বছর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল।
পরে ২০১৯ সালে আক্রান্তের সংখ্যা লাখেরও বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তারপর ২০২৩ সালে ২৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্তের এবং মৃতের সংখ্যা ছিল। তাই ডেঙ্গু নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না। আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনলে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে, আমরা একটি মৃত্যুও চাই না।
ডেঙ্গুর জন্য অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করতে হবে এবং আক্রান্ত হলে শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আসুন সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি, ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলি।
আরও পড়ুন:
নিঃশব্দ আততায়ী কালো ধোঁয়া
ডেঙ্গুর উপসর্গ ২০২৩ সাল থেকেই পাল্টে গেছে। ভাইরাস তার রূপ পরিবর্তন করে কখনো ভয়ঙ্কর, কখনো দুর্বলের ওপর হানা দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে তীব্র জ্বর না হয়েও হালকা জ্বর অথবা পেটে ব্যথা নিয়ে ধরা দিচ্ছে, তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ডা. আয়শা আক্তার : উপ-পরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা