বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

আহসান হাবিব
২২ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

গত ৭ জানুয়ারি ছিল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিল আওয়ামী লীগ। নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হলেন ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় এবার এখনো উপমন্ত্রী হিসেবে কাউকে রাখা হয়নি। বর্তমান মন্ত্রিসভার ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ও অভিজ্ঞ সদস্যরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। আর নতুন করে যুক্ত হলেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত এই মন্ত্রিসভার কাছে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। বিশেষত মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ না হলে মানুষের স্বস্তি আসবে না। সিন্ডিকেট সংকট দূর করে দুর্নীতিমুক্ত একটি শক্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর দেশের অপেক্ষা আপামর জনসাধারণের। এই সরকার যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে তা একটা স্বপ্নের মতো। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে এবারে সরকার নতুন নীতি বাস্তবায়ন করবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

বিগত সরকারের সময় সৃষ্টি হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সিন্ডিকেট। দফায় দফায় বেড়েছে শিশুদের খাদ্য, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, ডাল, চিনি, লবণ, রসুন, আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডিমসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। কিন্তু সরকার কোনোভাবেই এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এতে শ্রমজীবী খেটেখাওয়া মানুষরা হচ্ছেন দিশাহারা। এখন প্রশ্ন হলোÑ নতুন মন্ত্রিপরিষদ কি সেই পথে হাঁটবে? কারণ, ভোট শেষ হওয়ার পর দিনাজপুরে কয়েকদিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ধানের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা। আর প্রকারভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১০ টাকা। এটা নতুন সরকারের জন্য সুখকর হতে পারে না।

বাস মালিক ও শ্রমিকরা মিলে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। তাদের ইচ্ছেমতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। বাসের মালিক-শ্রমিক সিন্ডিকেট যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। যেন লুটপাট চলছে দেশে। বর্তমানে খুচরা এবং পাইকারি অসাধু ব্যবসায়ীরা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। এখন এমনই অবস্থা হয়েছে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের। শীতকাল হচ্ছে আমন মৌসুম। অথচ চালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। সাধারণ ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে। কিন্তু মানুষের বেতন তো বাড়ছে না। তা হলে মানুষ যাবে কোথায়? বাজার কেন অস্থিতিশীল হয়, কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেটা সরকারের জানা। কিন্তু নবীন-প্রবীণ নিয়ে গঠিত মন্ত্রিপরিষদ পারবে কি বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে? বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের নজরদারিতে যে চর্চা আছে তা হলোÑ কখনো কখনো কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযান চালিয়েছেন, জরিমানা করেছেন। সেটিও নিয়মিতভাবে করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোকে আরও জোরদার করতে হবে। বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায়ও অনেক ত্রুটি রয়েছে। এই ত্রুটি দূর করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজারের ওপর সঠিক নজরদারি দরকার বলে মনে করেন এ দেশের সাধারণ মানুষ। বাজার সিন্ডিকেটকে বিচারের আওতায় এনে যথাযোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করাই হোক নতুন সরকারের প্রথম কাজ। দেশের সিংহভাগ মানুষের কথা ভেবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নতুন সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেÑ এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

আহসান হাবিব : সাংবাদিক, ঢাকা।