সুন্দরবন রক্ষায় সচেতন হতে হবে
বিশ্বের বিস্ময়কর প্রাকৃতিক বনের একটি সুন্দরবন। সমুদ্র উপকূলীয় নোনাপানি ও নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন এটি। সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুস নামেও পেয়েছে পরিচিতি। আমাদের গর্ব, অহংকার ও ঐতিহ্যের ধারক এই বন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও একক অংশ। বছরের পর বছর ধরে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সুরক্ষা বলয়ের ভূমিকায় রয়েছে এ বন। বনটি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানের পাশাপাশি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা। সুন্দরবনের দেওয়া নিরাপত্তার বিপরীতে আমরা চালাচ্ছি বনব্যাপী ধ্বংসাত্মক সব কার্যক্রম। যা বনের জীববৈচিত্র্যকে দিনকে দিন হাজির করছে হুমকির মুখে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই সুন্দরবন ঝুঁকিতে রয়েছে। বিগত প্রায় তিন দশকে এ বন সংলগ্ন কৃষি কার্যক্রম প্রায় সতেরো হাজার ১৭৯ হেক্টর বন এলাকা ধ্বংস করেছে। চিংড়ি ঘেরে ধ্বংস হয়েছে আরও প্রায় ৭ হাজার ৬শ হেক্টর বনভূমি। শিল্প-কারখানা, কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও দেড় শতাধিকের বেশি সক্রিয় করাখানা বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনকে করছে তিলে তিলে ধ্বংস। ধ্বংসযজ্ঞ এভাবে চলমান থাকলে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সুনামির মতো দুর্যোগের সময় নিজের জৈবিক লড়াইয়ের ক্ষমতাও ফেলবে হারিয়ে। পাশাপাশি উপকূলীয় জনগোষ্ঠী পড়বে মারাত্মক হুমকির মুখে। আমাদের ক্রমাগত ধ্বংসযজ্ঞের ফলে ইতোমধ্যেই প্রায় দশ হাজার পরিবার হয়ে পড়েছে গৃহহীন। যার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া গৃহহীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে আরও এক লাখেরও বেশি মানুষ। বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে গত দুই দশকে আগুন লেগেছে প্রায় ৩৩ বার। এতে পুড়ে গেছে অন্তত একশ একরের বেশি বনভূমির গাছপালা। পত্র-পত্রিকায় উঠে আসা স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আগুন লাগার বিশেষ কারণ হলো, মাছ ধরা ও অবৈধভাবে বন থেকে মধু আহরণ। রয়েছে অবাধে নৌযানের চলাচল, গাছ কাটা, চোরাচালানসহ বেশ কয়েক ধরনের অবৈধ কর্ম বিষিয়ে তুলেছে সুন্দরবন ও তার জীববৈচিদ্র্যকে। নিয়মিত নৌযান চলাচল করায় বনের পাশে এখন আর হরিণ, বাঘ, বানরসহ তেমন কোনো বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে না বললেই চলে। তা ছাড়া ইদানীংকালে খুলনাসহ সুন্দরবনবেষ্টিত এলাকায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ উপায়ে বিদেশি কাপড়চোপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ ও মাদক চোরাচালানের নির্ভয় পথ হয়ে উঠেছে জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। মাদক ও চোরাকারবারিরা সড়কপথের বিপরীতে এখন ব্যবহার করছে সুন্দরবনের নিরাপদ নৌপথ। বিগত প্রায় ২৫ বছরেরও অধিক সময়ে সুন্দরবনের প্রাণখ্যাত সুন্দরী গাছের পরিমাণ ধারণাতীত কমে গেছে। যার পরিমাণ প্রায় অর্ধলক্ষ হেক্টর ছাড়িয়েছে বহু আগে। গাছ কমতে থাকায় দীর্ঘ এ সময়ে সুন্দরবনের ভেতরকার ঘন বন কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশেরও বেশি। এতে করে সুন্দরবনের সামগ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে হারাচ্ছে ভারসাম্য। অবৈধ উপায়ে জ্বালানি কাঠ লুণ্ঠন, দেদার ইঞ্জিনচালিত নৌযানের চলাচল ও গোলপাতা সংগ্রহসহ বিভিন্ন সম্পদ আহরণের কারণে ভবিষ্যতে সুন্দরবনে গাছ, প্রাণী ও কীটপতঙ্গ কমে যাওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
এ অবস্থায় বলা চলে, গহিন অরণ্যের এই বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় বন বিভাগ, দেশের নাগরিক ও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সুন্দরবনাঞ্চলের শিল্পমালিকদেরও সচেতন হয়ে ওঠার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ। রক্ষা পাবে উপকূল। শঙ্কামুক্ত হবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী।
আরও পড়ুন:
গ্রামীণ খেলা হারিয়ে যাচ্ছে কেন
আরও পড়ুন:
বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
জিহাদ হোসেন রাহাত : শিক্ষার্থী ,লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর
আরও পড়ুন:
নিঃশব্দ আততায়ী কালো ধোঁয়া