পদোন্নতিবঞ্চিত চারটি ব্যাচের কর্মকর্তারা

সোনালী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
পদোন্নতিবঞ্চিত চারটি ব্যাচের কর্মকর্তারা

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে চারটি ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকটির ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচে যোগদানকারী অফিসার ও সিনিয়র অফিসার পদের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই ব্যাচগুলোর কর্মকর্তারা বেশি বঞ্চিত। তারা ২৪ থেকে ৩০ বছর চাকরি করে বর্তমানে সিনিয়র প্রিন্সিপাল ও এজিএম হয়েছেন। অথচ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যথাসময়ে পদোন্নতি পেলে তারা অনেকেই ডিজিএম থাকতেন। এ ছাড়া পদোন্নতিতে বাণিজ্যের অভিযোগও করেছেন তারা। তাই দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে মেধা, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও প্রকৃত জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় নিয়ে বঞ্চিতদের এজিএম ও ডিজিএম পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদানের অনুরোধ করে সম্প্রতি ব্যাংকটির এমডিকে চিঠি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

চিঠিতে দুটি সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলো হলো- পদোন্নতি-বাণিজ্য চিরতরে বন্ধের জন্য পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভাইভা ও কম্পিউটার টেস্ট প্রথা বাতিল করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো যোগদানের তারিখকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা। এ ছাড়া সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যেসব জুনিয়র কর্মকর্তা সিনিয়রদের সুপারসিড করেছেন

তাদের ওপর ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি কার্যকর ও আর্থিক সুবিধা প্রদানের দাবি জানানো হয়। চিঠির অনুলিপি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টাকেও দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। জানতে চাইলে একজন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, চাকরিতে সিনিয়রিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিনিয়রিটি গণনা শুরু হয় যোগদানের তারিখ থেকে। এটি বিরামহীনভাবে চলতে থাকে। পরে যোগদানকারী কর্মকর্তারা কখনও আগে যোগদানকারী কর্মকর্তাদের ওপর সিনিয়রিটি পেতে পারে না। ক্যাডার সার্ভিস ও বাংলাদেশ ব্যাংকে এ রীতিই অনুসৃত হয়ে থাকে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকে ২০০৪ সালে যোগদানকারী কম্পিউটার অপারেটর, সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর ও অন্যান্য আইটি কর্মকর্তাদের ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচে যোগদানকারী অফিসার ও সিনির অফিসার কর্মকর্তাদের ওপর সিনিয়রিটি প্রদান করা হয়েছে, যা চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই উল্লিখিত চার ব্যাচের অফিসার ও সিনিয়র অফিসারদের প্রকৃত সিনিয়রিটি ফিরিয়ে দিতে হবে।

এ ছাড়া ২০০৪ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদানকারীদের অধিকাংশই ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ছাড়া ২০১৭ সালের মধ্যে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তারা কয়েক বছর ধরে এজিএম পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যাচ্ছেন। তাদের নিয়োগপত্রে শেষ গন্তব্য হিসেবে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সমতুল্য পদ উল্লেখ থাকলেও তা মুছে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে ২০০৪ সালে যোগদান করা সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর ও আইটি কর্মকর্তারা এখন সিনিয়র এজিএম ও ডিজিএম। কেউ কেউ জিএম ও ডিএমডি। আইটি সংশ্লিষ্টদের এক পদে তিন বছর পূর্ণ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদোন্নতি হয়ে যায়, ডিপ্লোমা বা মাস্টার্স প্রয়োজন হয় না। অনৈতিকভাবে তাদের আইটি এবং জেনারেল উভয় সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ওপর জ্যেষ্ঠতা প্রদান করা হয়েছে, যা চাকরি বিধির লঙ্ঘন।

আবার ২০০৪, ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০-এ যোগদানকারীরা এজিএম ও ডিজিএম হলেও ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০-এ যোগদানকারীদের অনেকেই এজিএম ও ডিজিএম হতে পারেননি। বৈষম্যমূলক পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, সোনালী ব্যাংকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি প্রচলন আছে। বিভিন্ন প্রকার তদবির ও অর্থের বিনিময়ে মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর কারসাজি করে সিনিয়রদের সুপারসিড করে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এতে সিনিয়র ও মেধাবীরা বৈষম্যের শিকার হন। এই পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল ও সংস্কার করতে হবে।