পুকুরে বিলীন হচ্ছে ফুলবাড়ীর কানাহার কবরস্থান

ওয়াহিদুল ইসলাম ডিফেন্স, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
পুকুরে বিলীন হচ্ছে ফুলবাড়ীর কানাহার কবরস্থান

ফুলবাড়ী পৌরবাসীর কেন্দ্রীয় কবরস্থানটির করুণ দশা। কারণ ৯ একর ৪৫ শতাংশ আয়তনের বিশাল কানাহার পুুকুরের পাড়ে গড়ে ওঠা ২ একর ৯০ শতাংশ আয়তনের এই কবরস্থানটি দিনে দিনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে পুকুরে। এটি কানাহার কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। ফুলবাড়ী পৌরসভা গঠনের পর এটিকে কেন্দ্রীয় কবরস্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কবরস্থানটি প্রকৃতপক্ষে পুরো পুকুরের চার পাড় জুড়েই।

পুকুরটি ক-তফসিলভুক্ত ভিপি সম্পত্তি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে মাছ চাষ করতে দিয়েছে। তারা ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ৩ বছরের জন্য জনৈক মাছ চাষিকে এটি লিজ দিয়েছেন। পুকুর থেকে বিপুল অর্থ আয় হলেও কানাহার পুকুর অথবা কবরস্থানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে পুকুরের পাড় ভেঙে কবরস্থান বিলীন হচ্ছে। পুকুরের পাড়ের কোথাও কোথাও অবাধে বিচরণ করছে গরু-ছাগল। এতে করে কবরস্থানের পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় খালেকুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম, মোহিদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন আনছারি অভিযোগ করেন, ৪০ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা সচ্ছল হয়েছে। এখনো কেন মুক্তিযোদ্ধাদের পুকুর লিজ দিতে হবে? পুকুরের আয়ের লাখ লাখ টাকায় কবরস্থান সংস্কার করা যেত। কিন্তু তা হচ্ছে না। বড় পুকুর হওয়ায় পানির ঢেউয়ে পাড় ভেঙে কবরস্থান বিলীন হচ্ছে। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে মুসল্লিদের অজু করার জন্য নির্মিত শানবাঁধানো পাড়টিও ভেঙে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক কবর পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। আর কতখানি ভাঙলে নজরে আসবে কর্তৃপক্ষের? আমাদের বাপ-দাদার কবরের পাশে আমার কবর দেওয়ার জায়গাটা অবশেষে থাকবে তো? এমন প্রশ্নও তাদের।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দীন বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের আমলে কানাহার পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন। মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়ে যে টাকা পাওয়া যায়, তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে দুই শতক কিনে কমপ্লেক্সে আসা-যাওয়ার রাস্তা করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো মুক্তিযোদ্ধার সমস্যায় এ টাকা খরচ করা হয় না।

সদ্য বিদায়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, যেহেতু ওই পুকুর ঘিরে কেন্দ্রীয় কানাহার কবরস্থান। তাই রক্ষণাবেক্ষণ করবে পৌরসভা। তবে কবরস্থান পৌরসভার দায়িত্বে পরিচালিত হলেও পুকুর থাকবে অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে, তা তো হয় না। কারণ পুকুর থেকে আয় হলেও পুকুরের সংস্কার হয় না এবং পুকুরের কারণে কবর ভেঙে যাচ্ছে সেটাও দেখা হচ্ছে না। এটা একটা সমন্বয়হীন অবস্থা। কবরস্থানটির বিষয়ে আমার সময়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় কবরস্থানকে পুকুর যে গ্রাস করছে, তা সত্য। নাগরিক সেবা দেওয়ার ব্যাপারে আমি জনগণের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছিলাম, সমন্বয়হীনতার কারণে কিছু করা সম্ভব হয়নি।

পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, সবেমাত্র দায়িত্ব পেয়েছি। আগে বিষয়গুলো জেনে নেই, তা হলে আমার জন্য কাজ করা সহজ হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে পুকুরটি তাদের সম্মানার্থে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, কানাহার পুকুরটি কবরস্থানকে গ্রাস করছে, তা দেখেছি। ইতোমধ্যে পৌরসভায় নতুন প্রশাসক এসেছেন, তার সঙ্গে আলোচনা করে কবরস্থান রক্ষায় গাইডওয়াল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কবরস্থানকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।