এমপক্স ভাইরাসজনিত রোগ থেকে সচেতন হতে হবে
এমপক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এমপক্স আলাদা ধরনের একটি পক্স ভাইরাস। এমপক্সের প্রধান দুটি ধরন আছে ক্লেড-১ এবং ক্লেড-২। দুটি ধরনের মধ্যে আবার সাবডিভিশন এ, বি রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২২-এ একবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল, মাঝে ২০২৩ সালে জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নিয়েছিল, ২০২৪-এ এমপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা। জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে বা ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক।
ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক। আফ্রিকার কঙ্গোতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও ছড়াচ্ছে। মাঙ্কিপক্স রোগটি মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হয়। স্মলপক্স হয় যে ভাইরাস থেকে, এটি সেই ভাইরাস ফ্যামিলিরই (ভ্যারিওলা ভাইরাস) অন্তর্গত।
মাঙ্কিপক্স কিনা, তা বোঝার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) করা হয়ে থাকে। মাঙ্কিপক্স চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা।
কারও শরীরে যদি মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখা দেয়, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে অবশ্যই নিজেকে আইসোলেশনে রাখতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এমপক্স ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়-
১। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
২। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে ক্লোজ কন্টাক্টে।
৩। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে।
৪। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার করলে।
৫। শুকিয়ে খসে পড়া ফোসকার আবরণ থেকে।
আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সতর্ক এবং সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সচেতন হলে আক্রান্ত ব্যক্তি সহজে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে এবং একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়বে না।
শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করলে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে। কেউ আক্রান্ত হলে আইসোলেশনে রাখতে হবে।
রোগটি সংক্রমক তাই একজনের কাছ থেকে আরেকজনে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত হলে অবশ্যই এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১৬২৬৩ হটলাইনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক সেবা পাবে।
শিশুদেরও মাঙ্কিপক্স হতে পারে। ফ্লুর মতো উপসর্গ যেমন- জ্বর এবং সর্দি, সেই সঙ্গে ফুসকুড়ি হয়। অল্পবয়সী শিশুরা সংক্রমিত হলে আরও গুরুতর পরিণতির ঝুঁকিতে থাকে। আগে প্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হতো। এখন মানুষ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
এয়ারপোর্ট থেকে কারও মধ্যে বাইরে থেকে আসার ২১ দিনের মধ্যে গঢ়ড়ী-এর উপসর্গ দেখা দিলে উএঐঝ-এর হটলাইন ১৬২৬৩-এ যোগাযোগ করবে।
১. শুরুতে ফ্লুর মতো ঠাণ্ডা কাশি হতে পারে।
২. শরীরে জ্বর আসা।
৩. কাঁপুনি এবং জ্বর।
৪. মাথাব্যথা।
৫. গলাব্যথা।
৬. পিঠের দিকে ব্যথা।
৭. মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি।
আফ্রিকার বাইরে এর আগে সুইডেন এবং পাকিস্তানে কেইস শনাক্ত হয়েছে এবং দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং স্ক্রিনিং জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরে। ১০৬৫৫-আইইডিসিআরে হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারবে।
আরও পড়ুন:
রহস্যে ঘেরা এক অসম যুদ্ধ!
উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন?
১। নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে অর্থাৎ আইসোলেশন করে রাখতে হবে।
২। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসক অথবা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
১৯৫৮ সালে ডেনমার্কে বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে রোগটিকে মাঙ্কিপক্স বলা হয়।
২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) রোগটির নাম পরিবর্তন করে এমপক্স (গঢ়ড়ী) রাখে। এই রোগের প্রাদুর্ভাব প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা যায়। দৃশ্যমান ফুসকুড়ি থেকে শুরু করে ফুসকুড়ির খোসা পড়ে যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ছড়াতে পারে।
এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যে কোনো প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়। ভাইরাসটি প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষকরা বলছেন, গুটিবসন্তের টিকা নিলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকেÑ কারণ এ দুটি ভাইরাসের অনেক মিল আছে।
ডা. আয়শা আক্তার : উপপরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা