খুব খুশি বীরবিক্রম হাফিজ
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। নানা গুণে গুণান্বিত তিনি। রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার। যদিও তার মতে, তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করার কথা ছিল।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ পড়াশোনা শেষ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে ১৯৬৮ সালে কমিশন পান। প্রথম কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন হাফিজ। যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।
এই সেনাকর্মকর্তা ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়ার ছিলেন। পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কও ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় দলের অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৮০ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। ফিফা’র আপিল ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪, ১৯৬৫ এবং ১৯৬৬ এই তিন মৌসুম পূর্ব পাকিস্তানের দ্রুততম মানব ছিলেন। ১০০ ও ২০০ মিটারে রেকর্ড টাইমিংয়ে স্বর্ণ পদক জেতেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ভোলা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের ছোবলে নারীর শ্রমবাজার
১৯৯২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তিনি ১৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ২৯ মার্চ ১৯৯৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদে খালেদা জিয়ার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ১১ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২২ মে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পাটমন্ত্রী, ২২ মে ২০০৩ থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত পানিসম্পদমন্ত্রী এবং পরে ২৪ এপ্রিল ২০০৬ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন ছিলেন হাফিজ উদ্দিন।
তবে, ওয়ান ইলেভেনে সেনাসমর্থিত মঈনদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে হাফিজকে দলের মধ্যে সবাই সন্দেহের চোখে দেখতেন।
আরও পড়ুন:
ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন মানবজাতি
কিন্তু ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অন্যদের মতো তিনিও ভোটবর্জন করেন। সেই থেকে তার ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ইতিবাচক দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আজ শুক্রবার দলের গণতন্ত্রের ক্ষমতা বলে হাফিজ উদ্দিন আহমদকে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদোন্নতি দিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে স্থান দেন তারেক রহমান।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি খুব খুশি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে মূল্যায়ন করায় তাদের ওপর কৃতজ্ঞ। ’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ কাউন্সিলের পর থেকে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে আলোচনায় ছিলেন।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তানে বহুতল শপিংমলে আগুন, নিহত ১১
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী