ডাকাত আতঙ্কে নারায়ণগঞ্জে স্থানীয়দের পাহারা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময় থেকে ভেঙে পড়ে দেশের পুলিশিং ব্যবস্থাও। সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলেও মাঠপর্যায়ে পুলিশের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হয়নি। আর এই সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা দেশব্যাপী নানা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ডাকাত আতঙ্ক। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিডিয়াতেও। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় স্থানীয়দের হাতে ডাকাতরা আটক হলেও পুলিশিং কার্যক্রম না থাকায় এবং থানা লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করায় সেসব ডাকাতদের গণপিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডাকাতদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে নারায়ণগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় নিজেদের বাড়িঘর রক্ষা করতে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় এলাকাভিত্তিক পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ দিন ধরে এটা চলছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল, পাইনাদী, মিজমিজি, তাঁতখানা, এনায়েতনগর, নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকার খানপুর, মাসদাইর এবং ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর নেতারা নিজ নিজ দায়িত্বে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন ডাকাতি রোধে। এসব সংগঠনের ফেসবুক পেজগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকেও সচেতনও করা হচ্ছে। পুলিশি কার্যক্রম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এনায়েত নগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সত্যের সন্ধানের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা তার সংগঠনের সবাইকে এবং দলমত নির্বশেষে সবাইকে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, যতদিন পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হবে ততদিন আমরা এই কাজটি করে যাব। এলাকা আমাদের, এলাকার মানুষগুলো আমরা সবাই সবার। দেশের এই পরিস্থিতিতে সবাইকেই ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় দায়িত্বরত যুবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। যতদিন পর্যন্ত এলাকায় চুরি-ডাকাতির শঙ্কা থাকবে, ততদিন তারা রাত জেগে এই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। পাশাপাশি অত্র এলাকায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেখা মিললে কিংবা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে, এলাকাবাসী সহজেই যাতে তাদের জানাতে পারেন, সে জন্য তারা কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়েছেন। ফোন পাওয়ামাত্রই তারা ঘটনাস্থলে চলে আসবেন। তিনি অতিদ্রুত সিদ্ধিরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশের কার্যক্রম শুরু করার অনুরোধ জানান।
নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সাইদ খান জানান, পুরো দেশেই এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ। সব এলাকাতেই ডাকাত আতঙ্কে আছে সাধারণ মানুষ। তাই আমরা এলাকার যুবসমাজ আমাদের এলাকা পাহারা দিয়ে সবার জানমালের নিরাপত্তার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে আমরা দ্রুত পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু গতকাল থেকে তা আবার শুরু হয়েছে। হয়তো স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগছে। আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এলাকায় এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ছাত্ররা এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষও নিজ উদ্যোগে পাহারা দিচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক করে আনার। সবার সহযোগিতায় সেটা দ্রুতই স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।