১৮৫৬৬ পরিবার নিজ ঘরে উঠবেন আজ
ভোলার চরফ্যাশনের চরকচ্ছপিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় সাজ সাজ রব বইছে। লাল-সবুজের টিনশেডের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সহায় সম্বলহীন মানুষের মুখেও ফুটছে সুখের হাসি। এ হাসি নতুন করে স্বপ্ন দেখার। যে মানুষগুলো একদিন আগেও অন্যের বাড়িতে, নদীর ধারে থাকত, আজ তারা নিজের বাড়িতে উঠবেন। যেখান থেকে কেউ তাদের উচ্ছেদ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই ঘরগুলো দেওয়া হচ্ছে। এদিকে আর মাত্র কয়দিন পরই ঈদুল আজহা। এর আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আজ অসহায় সম্বলহীন পরিবার প্রায় ১৯ হাজার পরিবার পাচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং স্থায়ী ঠিকানা।
শুধু এই চরফ্যাশন নয়, আজ সারাদেশে আঠারো হাজার ৫৬৬ গৃহহীন মানুষ ঘর পাবেন। এর মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ৫৮ জেলার ৪৬৪ উপজেলা গৃহহীনমুক্তও হবে আজ মঙ্গলবার। সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘরগুলো হস্তান্তর করবেন। এবার দ্বিতীয় ধাপের পঞ্চম পর্যায়ের ঘর হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি ২৬ জেলা ও ৭০ উপজেলা গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়। একই সঙ্গে কক্সবাজার, ভোলা ও লালমনিরহাট জেলার ভূমিহীনদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলাসহ ৭০ উপজেলা।
চরকচ্ছপিয়া ঘর পাওয়া কয়েকজনের ভাষ্য- কখনো নিজের ঘরে বসবাস করতে পারব ভাবিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন। আমরা তার জন্য প্রাণভরে দোয়া করি।
আরও পড়ুন:
ডেমরায় এক কক্ষে কিশোরী ও যুবকের মরদেহ
বেদখল, মামলা, হামলার মতো নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আশ্রয়ণ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। পদে পদে বাধা অতিক্রম করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে নতুন ঘর তুলে দিচ্ছেন বলে জানান ডিসি আরিফুজ্জামান।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদি টেকসই করার উত্তম চর্চা হিসেবে সমাদৃত হয়েছে উপরিউক্ত বৈশিষ্টসম্পন্ন ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শেখ হাসিনা মডেল’। এরই ধারাবাহিকতায়, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় আনছেন। সমাজের অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা একক ঘর প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া এসব মানুষের জীবনমান উন্নততর হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে বিনামূল্য বিদ্যুৎ সংযোগ ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থার মাধ্যমে আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
বদলে গেছে ইয়ানুরদের জীবন : চরফ্যাশনের পার্শ্ববর্তী এলাকা বশীভূষণ থানা। বশীভূষণের জাহানপুর গ্রামে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণের আদর্শগ্রাম। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী একজনের নাম ইয়ানুর। তিনি ও দুই সন্তান-স্বামী নিয়ে একটি ঘরে থাকেন। ঘরের আশপাশে বেগুন, পেঁপে, পেয়ারা, কলাসহ নানারকম ফলদ ও ঔষধি গাছ লাগিয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনার চেষ্টা করছেন। অন্যের বাড়িতে মানুষের করুণা নিয়ে কোনো রকমভাবে বেঁচে থাকা ইয়ানুর আজ নিজের ঘরেই শুধু থাকেন না। নিজের ঘর ও সংসারকে রাঙানোর কথা তিনি প্রতিনিয়ত ভাবেন। জাহানপুর আশ্রয়ণের প্রতিটা ঘরেই আছে জীবন বদলে যাওয়ার দৃশ্য। নিজ ঘরে উঠে তারা তাদের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছেন সব।
আরও পড়ুন:
আফরোজা পারভীন পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
ওখানকার একজন জসীম মিয়ার জীবনও পাল্টে গেছে ওই বাড়িসহ ঘর। নিজে অটোরিকশা চালান আর স্ত্রী-সন্তান আগলে রাখার পাশাপাশি ঘরের চারপাশের ফলদ গাছ এবং হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে আয়ের উৎস তৈরি করেছেন। আগে কেবল কোনো রকম বেঁচে থাকার কথা ভাবতেন। আজ তিনি স্থায়ী ঠিকানা পেয়েই খান্ত নন, সন্তানদের পড়ানোর বিষয়েও রয়েছে প্রবল আগ্রহ।
চরফ্যাশনের আরেকটি এলাকার নাম এওয়াজপুর। সেই আশ্রয়ণের প্রায় প্রতিটি ঘরে আছে বদলে যাওয়া জীবনের গল্প। কথা হয় ওই গ্রামে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণের আদর্শগ্রামের একজন আইরিনের সঙ্গে। আগে তিনি অন্যের বাড়িতে থাকতেন। আজ নিজের বাড়িতে থাকেন।